সোশ্যাল মিডিয়া হোক কিংবা তাদের বিভিন্ন সম্মেলনে, হামেশাই রামকৃষ্ণ মিশনকে কটাক্ষ করে থাকেন ইসকনের সাধুরা। কখনও তাঁদের নিশানায় থাকেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, আবার কখনও সেই নিশানার তির ঘুরে যায় স্বামী বিবেকানন্দের দিকে। কিন্তু পূর্বের সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে সম্প্রতি রামকৃষ্ণদেব ও বিবেকানন্দকে ইসকনের নবীন সাধু অমোঘ লীলার বেনজির আক্রমণ। ভক্তদের উদ্দেশে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য ও তাতে ইসকনের ভূমিকা বোঝাতে গিয়ে সরাসরি রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের দর্শনকে আক্রমণ করেছেন তিনি! এবার সেই তাকেই একহাত নিলেন কবি শ্রীজাত।
নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ধর্ম, অর্থাৎ ‘যা ধারণ করে’। এবার সেই ধারণ করার পাত্রকে তুমি আকারে যত ছোট করে আনবে, তোমার ধর্মাচরণও তেমনই হবে। চারপাশ থেকে নিয়মের নিগড়ে বাঁধতে বাঁধতে এক সময় ভাবনার কঙ্কালটাই পড়ে থাকবে শুধু, প্রাণ থাকবে না তার। এঁদের হয়েছে সেই দশা। কী খাব না, কী পরব না, কোথায় যাব না, এইসবই হয়ে দাঁড়িয়েছে মোক্ষ। কী করব, এটা আর লক্ষ্যে নেই। থাকলে আজ এই সমস্ত কথা ব’লে মানুষজনকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে বিব্রত করতেন না। আমি যদি গান লিখতে এসে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করি বা ফিজিক্স পড়াতে গিয়ে আইনস্টাইনকে অস্বীকার করি, তাহলে যেমনটা হবে, ইনিও ঠিক তেমনটাই করেছেন।’
শ্রীজাতর মতে, ‘মুশকিল হয়েছে কী, এঁদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণ কেবলই একজন পূজারী পুরোহিত এবং স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র একজন গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী হয়ে থেকে গেছেন। এই দুই মানুষের তথা মনীষীর ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি, দর্শন, চিন্তাধারা বা সামগ্রিক অবদান, এসবের কিছুই জেনে দেখা হয়নি। অজ্ঞানতা অবশ্য একধরনের ক্ষমা দাবি করতে পারে, কিন্তু এর উল্টোদিকটা আরও মারাত্মক। তা হলো, জেনেও অবজ্ঞা করা, বুঝেও তাচ্ছিল্য করা। এর মধ্যে একধরনের অপরায়নের রাজনীতি কাজ করে। উড়িয়ে দাও। নেগেট করো। তা যদি নিজের অশিক্ষা বলে প্রমাণিত হয়, তাও করো। দুই বাঙালির মহাজোট যে-অসাধ্যসাধন করে গেছে, প্রাদেশিকতার ঘোমটার আড়াল থেকে তাকে অন্যায্যের খেতাব দাও।’
শ্রীজাতর সাফ কথা, ‘অমোঘবাবু বোধহয় ভুলে গেছেন, যে-বহুতল বাড়ির ৪৫ কি ৬৭ বা ৮৩ তলার কোনও একখানা কামরা থেকে তিনি গলা তুলে কথা বলছেন, সেই বহুতলের ভিতটার নাম স্বামী বিবেকানন্দ। আর যে-জমিতে সেই ভিত খোঁড়া হয়েছিল, সেই জমিটার নাম পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ। আজ গেরুয়া বসন গায়ে চাপিয়ে কপালে তিলক কেটে মুখে মাইক এঁটে যেটুকু করে খাচ্ছেন, তার একবিন্দুও জুটত না, এই দু’জন মানুষ ধর্মচর্চার দরজা হাট করে খুলে না-দিলে। কাজটা হয়তো একা হাতে করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, কিন্তু তাঁর মাটিকে প্রতিমায় রূপান্তরিত করেছেন যে-কারিগর, সেই শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই বা কম কীসে?’