এবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতিই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থাকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এবার সরব হলেন অভিষেকও। আজ, শুক্রবার তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘‘বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সমাজবিরোধীদের রক্ষাকবচ (প্রোটেকশন) দিচ্ছেন।’’ অভিষেক এও বলেন, যদি এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে জেলে যেতে হয়, তা হলে তিনি ১০ হাজার বার জেলে যেতেও রাজি। কিন্তু সত্যি বলবেন তিনি
উল্লেখ্য, ভোটের পরের রাজনৈতিক সংঘর্ষে নন্দীগ্রামের ১১ জন জখম তৃণমূলকর্মী এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার তাঁদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিষেক। তার পর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই বিচারব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের সেনাপতি। আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘কারা এই হামলায় যুক্ত, আমি তাদের নাম নোট করেছি। এই তালিকা আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেব।’’ অশোক করণ, পবিত্র কর, মেঘনাদ পালের মতো বেশ কিছু বিজেপি নেতার নাম করে তিনি বলেন, ২০ জনের তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে দেবেন। তার পরে অভিষেক সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দুর্ভাগ্যজনক হল, বিচারব্যবস্থার একটা অংশ এদের প্রোটেকশন দিয়ে রেখেছে। একজন বিচারপতি সমাজবিরোধীদের প্রোটেকশন দিচ্ছেন।’’ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘বিচারব্যবস্থার একাংশ’ বলে আক্রমণ শানালেও পরে সরাসরি বিচারপতি মান্থার নাম করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘এই একজন বিচারপতি শুভেন্দু অধিকারীকে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছেন। ভবিষ্যতে তিনি কোনও অপকর্ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা যাবে না! এফআইআর করা যাবে না!’’
পাশাপাশি, বিচারপতির উদ্দেশে সপাট প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি যদি প্রোটেকশন চাইতে যাই, আমায় দেবেন? খালি শুভেন্দু অধিকারীর ছত্রছায়ায় থাকা নেতাদের প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে।’’ তৃণমূলের শীর্ষনেতার সাফ কথা, ‘‘আমি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলছি। তাতে আমার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিক।’’ সেখান থেকে বেরিয়ে অভিষেকের বক্তব্য, “যাদের জেলে থাকার কথা, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে পুলিশের হাত, পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি যেভাবে একটা রাজনৈতিক দলকে মদত দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।” অভিষেকের এও দাবি, স্বাধীনতার পর বিচারব্যবস্থার এরকম পক্ষপাত দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, “আজ বলতে বাধ্য হলাম। কারণ, শুধুমাত্র একজন বিচারপতির জন্য সমগ্র বিচারব্যবস্থা কলুষিত হচ্ছে।” অভিষেকের প্রশ্ন তুলেছেন, “বিজেপির প্রতি এই বিচারপতির কি বাধ্যবাধকতা? কেন বেছে বেছে বিজেপির নেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন তিনি?” তাঁর কথায়, “আমার বিরুদ্ধেও তো ইডি, সিবিআই লাগিয়ে রেখেছে। আমি প্রোটেকশন চাইলে দেবেন? দেবেন না! বিজেপি নেতারা না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছে!” প্রসঙ্গত, বিচারব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে এর আগেও প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন অভিষেক।