গত আইপিএলে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন তিনি। তার আগে ঘরোয়া ক্রিকেটেও করেছেন ঝুড়ি ঝুড়ি রান। আর এবার দেশের টেস্ট দলের জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচেই ঝকঝকে শতরান এল তাঁর ব্যাট থেকে। তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল বুঝিয়ে দিলেন, ভারতীয় দলে তাঁকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না একেবারেই। যশস্বী ১৭তম ভারতীয় ব্যাটার, যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন লালা অমরনাথ। ১৯৩৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম ম্যাচে শতরান করেছিলেন। এর পর একাধিক ক্রিকেটার নিজের প্রথম টেস্টে শতরান করেছেন। তাঁদের মধ্যে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ানেরা রয়েছেন। ২০২১ সালে অভিষেক হয় শ্রেয়স আয়ারের। তিনিই শেষ ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। তার আগে ২০১৮ সালে অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন পৃথ্বী শ।
উল্লেখ্য, এবারের আইপিএলে শতরান করেছিলেন যশস্বী। ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করেছিলেন। রঞ্জি ট্রফিতেও ধারাবাহিক ভাবে রান করছিলেন। তাই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ক্যারিবিয়ান সফরের দলে তাঁর নির্বাচনের খবর পেয়ে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যশস্বী। এএক স্বপ্নপূরণেরই কাহিনী। যে স্বপ্ন দেখে এক পরিবার উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বই চলে এসেছিল। সেই স্বপ্ন সত্যি হল। যশস্বী জয়সওয়াল টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে কেঁদেই ফেলেছিলেন তাঁর বাবা। এত দিনের সব কষ্ট এখন আনন্দাশ্রু হয়ে বেরিয়ে এসেছিল। বৃহস্পতিবার সেই আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে ছেলের শতরান দেখার পর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যশস্বীই প্রথম ভারতীয়,।যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন। গত মরসুমে একের পর এক ম্যাচে খারাপ খেলার কারণে দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি এতটাই ভাল ছন্দে, যে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারছেন না। কয়েক মাসের ব্যবধানে যশস্বীর জীবনটা বদলে গিয়েছে এ ভাবেই। তবে সেই পরিবর্তন এক দিনে আসেনি। এর পিছনে জড়িয়ে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।
প্রসঙ্গত, মুম্বই থেকে তালেগাঁওয়ে গিয়ে যশস্বীর অনুশীলন করার কথা ইতিমধ্যেঈ জেনেছেন অনেকে। ঘরোয়া মরসুমের শেষে গত বছর মুম্বই থেকে নাগপুরের তালেগাঁওয়ে রাজস্থান রয়্যালসের ডিরেক্টর জুবিন ভারুচার অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতে যান যশস্বী। সেখানে গিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ডুবিয়ে দেন নিজেকে। প্রতি দিন সেই অ্যাকাডেমিতে পাঁচশোটি থ্রোডাউন নিতেন যশস্বী। সিমেন্টের পিচে অনুশীলন করতেন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বলে। বেশ কয়েক বার আঘাতও পেয়েছেন শরীরে। এ ছাড়া লাল মাটি এবং কালো মাটির পিচে আলাদা করে অনুশীলন করেন। অফসাইডে শট খেলতে যশস্বীর কিছুটা দুর্বলতা ছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠেন নাগাড়ে অনুশীলন করে। এ ছাড়া নিজের পায়ের আরও ব্যবহার, সুইপ মারা এবং সুইচ হিটে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এখন পিচের যে কোনও জায়গায় বল ফেললে তা মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন তিনি। পেয়েছিলেন আর একজনের পরামর্শ। তিনি সূর্যকুমার যাদব। আইপিএলে একটি ম্যাচের পর সূর্য তাঁকে বলেছিলেন, “নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করতে থাকো। মাঠে গিয়ে শুধু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করো। ক্রিকেট শুধু মাত্র মস্তিষ্কের খেলা।” একই সঙ্গে বড়দের উপদেশ তো রয়েছেই। “ক্রিকেটীয় পরিবেশের মধ্যে থাকতে ভালবাসি। আমার চারপাশে অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার রয়েছে। সুযোগ পেলেই এমএস ভাই, বিরাট ভাই, রোহিত ভাই, জস ভাই, সঞ্জু ভাইদের সঙ্গে কথা বলি। জেনে নিই কী ভাবে নিজেকে শান্ত রাখা যায়। কী ভাবে ভাবনাচিন্তায় বদল আনা যায়। সব সময় কিছু শেখার চেষ্টা করে খেলায় উন্নতি করার চেষ্টা করি”, জানিয়েছেন যশস্বী।