তাঁর বিরুদ্ধে ছিল একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের পর মার্টিনিয়ার স্কুলের নিয়ন্ত্রণ হারালেন ‘বিজেপি-ঘনিষ্ঠ’ বিশপ পরিতোষ ক্যানিং। আদালত নতুন পরিচালন বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দিল। যা নিঃসন্দেহে বিশপের কাছে বড়সড় ধাক্কা। এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুটি স্কুলের বোর্ড অফ গভর্নরদের স্কুলগুলির পরিচালনার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পদাধিকারবলে গভর্নররা যেকোনও ব্যক্তিকে অতিরিক্ত গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন না, যতক্ষণ না মামলার নিষ্পত্তি হয়। বিগত ২০১৯ সালের ১২ই জুলাই মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে স্কুলগুলির দৈনন্দিন পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয় ব্যতীত বোর্ড অফ গভর্নরস দ্বারা নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ করা যাবে না নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত বা সেই বিষয়ে নেওয়া কোনও পদক্ষেপ। অনুমান করা হচ্ছে, পুজোর আগে লা’মার্টিনিয়ার স্কুল-যুগলের পরিচালনার জন্য গঠন করা হবে ১২ জন বিশিষ্ট একটি ধর্মনিরপেক্ষ বোর্ড।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়া (সিএনআই) কলকাতার বিশপ পরিতোষ ক্যানিংয়ের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে সিএনআইয়ের কলকাতা ও ব্যারাকপুর শাখার সদস্যরা। অল বেঙ্গল ক্রিশ্চান পিপলস ফোরাম নামে একটি সংগঠন কিছুদিন আগে এই অর্থে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করে। বিশপ পরিতোষ ক্যানিং রেভারেন্ড পিসি সিংয়ের ঘনিষ্ঠ তথা আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। এই পিসি সিংয়েরও হিসেব বহির্ভূত সম্পত্তির হদিশ মিলেছে আগেই, অর্থনৈতিক প্রতারণা ও কেলেঙ্কারির কারণে মধ্যপ্রদেশে পিসি সিংয়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করছে বলেও জানা গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পিসি সিং ঘনিষ্ঠ বিশপ পরিতোষ এবং তার লোকজন বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখছে, যাতে আর্থিক কেলেঙ্কারিজনিত তদন্ত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চলতি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে দেখা করেছিলেন বিশপ পরিতোষ। সেই ছবিও সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সিএনআইয়ের কলকাতা ও ব্যারাকপুর শাখার সদস্যরা সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করছিলেন, বিশপের পদে থেকে সেই পদের অপব্যবহার করে ফায়দা তুলছেন বিশপ পরিতোষ। চার্চ ও বিশপ পদের মর্যাদার অবনমন ঘটাচ্ছেন তিনি। এনআই লা মার্টিনিয়ার, সেন্ট জেমস, সেন্ট টমাস খিদিরপুর, স্কটিশ চার্চ কলেজসহ বহু বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। সিএনআই পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির জন্য মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন বিশপ পরিতোষ, এমনই অভিযোগ উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর চরমে পৌঁছেছে বিতর্কের ঝড়।