তৃণমূল বরাবরই সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শই হল মানুষের পাশে থাকা। আর সে কথাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এবার নজির গড়লেন আরামবাগের তৃণমূল নেতা। আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির ২০ নম্বর আসনে তখন ভোট গণনা চলছিল। তিনটি ব্যালট বাক্স খুলে গণনার পর দেখা যায় বিজেপি প্রার্থী অরূপ কুমার দেওয়ান একশোর মতো ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। তার পর বাকি দুটি ব্যালট বাক্স নাকি খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। শুরু হয় ব্যালট বাক্স খোঁজার কাজ। অরূপ স্থানীয় বিডিওর দ্বারস্থ হন। গণনা কেন্দ্র তন্ন তন্ন করে খোঁজা শুরু হয়।
এ খবর কানে যায় আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের স্বামী তথা রিষড়া পুরসভার কাউন্সিলর সাকির আলির কাছে। সাকির ওই বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে যান। তাঁদের অনুরোধ করেন, ব্যালট বাক্স খুঁজে দিতে। পরে অরূপ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তৃণমূল কাউন্সিলরের কারণেই তিনি ব্যালট বাক্স খুঁজে পেয়েছেন। বাকি দুটো ব্যালট বাক্স খুলে গণনা শুরু হয়। দেখা যায়, শেষমেশ অরূপ দেওয়ানই জিতেছেন। ভোটে জিতে শংসাপত্র হাতে নিয়ে সোজা তৃণমূল কাউন্সিলরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন বিজেপি প্রার্থী। সাকির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি হঠাৎ গণনা কেন্দ্রে দেখি এই বিজেপি প্রার্থী হয়রান হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ভাই তোমার কী হয়েছে। উনি বললেন, আমাদের দুটো ব্যালট বাক্স খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি হেরে গেছি।’
সাকিরের কথায়, ‘আমি ওঁকে বলি, দুটো ব্যালট বাক্স গোনাই হল না, আপনি হেরে গেলেন কীভাবে? এর পর আমি বিডিওকে বলি। উনি বলেন, বাক্স পাওয়া গেছে। গোনাও প্রায় শেষ। উনি ১৬৬ টি ভোটে জিতেছেন।’ সাকিরের কথায়, ‘আমাদের প্রার্থী ভেবেছিলেন, উনি জিতে গেছেন। তাই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু অরূপ পরিশ্রম করছিল বাক্স খুঁজতে। মানুষের রায়েই ও জিতেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শই হল মানুষের পাশে থাকা। পঞ্চায়েতে হার-জিত থাকবে। কিন্তু আরামবাগে আমরা অন্তত চেয়েছি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য থাকুক। মানুষ যাঁর পক্ষে রায় দেবেন তিনিই জিতবেন।’