সোশ্যাল মিডিয়া হোক কিংবা তাদের বিভিন্ন সম্মেলনে, হামেশাই রামকৃষ্ণ মিশনকে কটাক্ষ করে থাকেন ইসকনের সাধুরা। কখনও তাঁদের নিশানায় থাকেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, আবার কখনও সেই নিশানার তির ঘুরে যায় স্বামী বিবেকানন্দের দিকে। তবে এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল রামকৃষ্ণদেব ও বিবেকানন্দকে ইসকনের নবীন সাধু অমোঘ লীলার বেনজির আক্রমণ। ভক্তদের উদ্দেশে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য ও তাতে ইসকনের ভূমিকা বোঝাতে গিয়ে সরাসরি রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের দর্শনকেই আক্রমণ করে বসলেন তিনি! আর তা করতে গিয়ে ছাড়িয়ে গেলেন শালীনতার মাত্রাও।
রামকৃষ্ণ তাঁর ‘যত মত তত পথ’ বাণীতে মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন ঈশ্বরকে অনুভবের বহু পথ। এক এক মতের মানুষ এক এক পথ ধরে এগোতে পারেন। কিন্তু শেষে সেই একই অভীষ্টে পৌঁছবেন তাঁরা। কিন্তু পরমহংসদেবের সেই দর্শনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অমোঘ লীলা বলেন, ‘যে রাস্তা দিয়ে ইচ্ছে যাওয়ার বেরিয়ে পড়, গন্তব্য একই হবে। সেটা কখনই হয় না। আমি যদি মায়াপুর যেতে চাই, তবে ডান-বাম-আগে-পিছে যে কোনও রাস্তা ধরে যাওয়া সম্ভব নয়। একটি নির্দিষ্ট রাস্তা ধরতে হবে।’ শুধু রামকৃষ্ণ নন, বিবেকানন্দর নীতিকেও সমালোচনা করেছেন অমোঘ লীলা। তিনি বলেন যে, বিবেকানন্দকে তিনি শ্রদ্ধা করেন ঠিকই, কিন্তু সব মানতে পারেন না। তিনি কখনই বিবেকানন্দকে সিদ্ধ পুরুষ মনে করেন না।
অমোঘ লীলার ব্যাখ্যা, ‘কোনও সিদ্ধপুরুষ কখনও কোনও পশু মেরে খাবেন না। বিবেকানন্দ যদি মাছ খান তবে কীভাবে তিনি সিদ্ধপুরুষ হবেন?’ জাতির মেরুদণ্ড গঠনে খেলাধূলাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন বিবেকানন্দ। মনে করতেন খেলাধূলার মাধ্যমে একটা মানুষের শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব। তাই গীতাপাঠ না করলেও চলবে, কিন্তু ফুটবলটা যেন খেলে যুবসমাজ। কিন্তু ইসকনের সাধু বিবেকানন্দের এই চিন্তাচেতনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘খেলাধূলা করাই মনের বিকাশের জন্য শেষ কথা হতে পারে না। গীতা পাঠ করাটা অত্যন্ত জরুরি।’
ইসকনের সাধু অমোঘ লীলার এহেন বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন নেটিজেনরা। সকলেরই এক দাবি, হিন্দু ধর্মের প্রসারে বিবেকানন্দের ভূমিকাকে খর্ব করতে গিয়ে বেনজির আক্রমণ করে ফেলেছেন তিনি। যা কখনই কাম্য নয়। বাঙালির ভাবাবেগ ও তাদের ‘আইকন’ রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দকে আঘাত করে ঠিক করেননি বলেও মত অনেকের। অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অমোঘ লীলার ওই ভিডিও টুইট করে লেখেন, ‘ইস্কন আমাদের প্রিয়। কিন্তু তার এই বাচালের অসভ্যতা বন্ধ করুন তাঁরা। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে অপমান করে এসব কথা বললে বরদাস্ত করা হবে না।’