সময়টা বাম আমল। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত দু’নম্বর ব্লকের শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতর নাম শুনলেই, অনেকেরই শিড়দাঁড়া দিয়ে বয়ে যেত ঠান্ডা স্রোত। আর তার পেছনে ছিল একটি মাত্র নাম। যাঁর নামে সেই সময় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। তিনি সিপিআইএম নেতা মজিদ আলি, তবে সকলের কাছে বেশি পরিচিত শাসনের মজিদ মাস্টার নেমেই।
পেশায় শিক্ষক হলেও, বাম আমলে জেলার রাজনীতিতে, বিশেষত ভেড়ি এলাকায় লালঝান্ডার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে তিনিই ছিলেন প্রধান কাণ্ডারী। তবে, দল করতে গিয়ে বহু সময় আক্রান্ত হতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও থেকে গিয়েছেন দলের একনিষ্ঠ সৈনিক হয়েই। কখনই বদলাননি দল। তবে মাঝের বেশ কয়েকটা বছরে বদলে গিয়েছে ছবিটা। এখন শাসন এলাকার রাশ শাসকদলের হাতে। বদলে গিয়েছে মাস্টারের জীবনও। পরবর্তীতে ছেড়েছেন দল। এখন থাকেন চাষবাস ও পড়াশোনা নিয়েই।
সংবাদমাধ্যমে নজর রাখা ছাড়া রাজনীতির সঙ্গে আর কোনও যোগ নেই শাসনের মাস্টারের। তবে শাসন এখন ভাল আছে বলেই মনে করছেন মজিদ আলি। কথা বলতে গিয়ে জানালেন, ‘রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে, ঘরবাড়ির উন্নতি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা ভাল জামাকাপড়-মোজা পড়ে স্কুলে যায়, যা দেখে আমার হিংসা হয়। কারণ এমন ঝকঝকে মোজা পরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি’।
এমনকী সরকারি পরিষেবা নিয়েও বেশ সন্তোষ প্রকাশ করলেন মজিদ মাস্টার। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে উঠে পড়ে লেগেছে বামেরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কারও কারও মতে, বামেরা আগের চেয়ে বেশ কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছে। কেউ কেউ বলছেন বামেরা আবার ফিরতে পারে। যদিও মজিদ মাস্টার অবশ্য তেমনটা মনে করেন না। তিনি জানান, ‘আমি সিপিআইএম ছেড়ে দিয়েছি। তবে দীর্ঘদিন পার্টির সদস্য ছিলাম। আমি আমার পার্টির সম্পর্কে বদনাম করতে পারব না। সেটা আমার নীতি বিরোধী। কারণ থুতুটা ওপর দিকে ছিটালে নিজের মুখেই পড়ে’।
তাঁর সংযোজন, ‘একটা ছোট্ট কথা বলতে পারি, সিপিআইএম পার্টি বর্তমানে আদর্শ্যচ্যুত হয়েছে। কারণ সিপিআই বা সিপিআইএম-এর প্রধান রাজনৈতিক শত্রু কংগ্রেস। সেই কংগ্রেস এখন বন্ধু হয়েছে। আইএসএফ-এর সঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে বোঝাপড়া হয়েছিল। আইএসএফ-এর নেতারা হলেন ফুরফুরার পীরসাহেবদের ছেলেরা। ধর্মীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সমঝোতা করা, বন্ধুত্ব করা মার্কবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বোধ হয় ঠিক নয়, আদর্শ বিরোধি। এইটা আমি মেনে নিতে পারি না’। মাস্টারের কথায়, ‘কমিউনিস্ট পার্টির মূল শক্তি হল আদর্শ। কোনও বুর্জোয়া দলের সঙ্গে যদি সমান হয়ে যায়, তাহলে সিপিআইএম-কে কেন ভোট দেবে? আরও তো বুর্জোয়া দল পশ্চিমবঙ্গে-ভারতবর্ষে আছে’।