প্রায় এক যুগ হল ১০০-এর অঙ্ক ছাড়িয়েছে বয়স। তবে এখনও জরা সেভাবে তাঁর শরীরে প্রকোপ ফেলতে পারেনি। পায়ে হেঁটে নিয়ম করে পাড়া বেরিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজ নেন কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জের ১১২ বছরের হারাধন সাহা। এবারও পায়ে হেঁটেই পঞ্চায়েত ভোট দিতে যাবেন জেলার সবচেয়ে প্রবীণ ভোটার হারাধনবাবু। ব্রিটিশ আমলে ইউনিয়ন বোর্ডের সময় থেকেই ভোট দিচ্ছেন তিপি। ২০১৬ বিধানসভাতেও কারও সাহায্য ছাড়া একাই বুথে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছিলেন। তবে তাল কেটেছে এবার। মনের জেদ এবার হার মেনেছে অশক্ত শরীরের কাছে। তবে ভোট দেবেন বলে এখন থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। এলাকার মানুষ ভালবেসে তাঁকে ডাকেন ‘ছোঁড়া’ বলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইংরেজ-জমানায় দাপটের সঙ্গে ঠিকাদারী করেছেন। চাষের কাজ দেখভাল করেন এখনও। পুরো তল্লাটে একডাকে সবাই চেনেন ‘ছোঁড়া’কে। ঘর থেকে মাত্র ৭০০ ফুট দূরেই সরস্বতীগঞ্জ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট গ্রহণ কেন্দ্র। বুথ নম্বর ২১৭। বরাবরের ডানপন্থী হারাধনবাবুর পছন্দের মেয়ে ‘ঘরের মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অকপটে তা জানালেনও তিনি। ব্রিটিশ আমলে লাউদোহা কালিনগর গ্রামে ভোট দিতে যেতেন হারাধন সাহা। কখনও গরুর গাড়ি করে আবার কখনও সাইকেলে চড়ে স্বাধীন ভারতে মলানদিঘিতে যেতেন ভোট দিতে। তারপর তাঁদের গ্রামে গড়ে ওঠেছে ভোট কেন্দ্র। ২০১১ সাল থেকে সরস্বতীগঞ্জের বুথে ভোট দিয়ে আসছেন হারাধন সাহা। এখনও ভোরে নিয়ম করে ওঠেন। সামান্য জলখাবার খেয়েই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়েন পাড়ায়। তবে বয়সের কারণে ‘ছোঁড়া’র ভরসা এখন লাঠি। বিছানায় শুয়ে হারাধন বাবু জানান, “বেঁচে যখন আছি ভোট দেবই। যতদিন বেঁচে থাকব ভোট দিয়ে যাব। এটা আমার অধিকার। এখন ঠান্ডা গরম লেগে শরীরটা একটু বেগ দিচ্ছে। দুই একদিনেই সুস্থ হয়ে যাবো। পঞ্চায়েতে ভোট দিতে বুথে হেঁটেই যাব।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রবীণ ভোটারদের ভোট দানে সুবিধার জন্যে বুথে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি শতায়ু ভোটারদের ব্যাপারেও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে ব্লক প্রশাসন।