স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ফের তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বাংলাতেও এবার চালু হতে চলেছে ডায়াল ১০৮ ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস। এই পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে, বেসরকারি পার্টনার বাছাই করার জন্য ইতিমধ্যেই ডাকা হয়েছে টেন্ডার। সরকারি হিসেব মতো দেশ জুড়ে গত দেড় দশকে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাণ বাঁচিয়েছে এই পরিষেবা। এবার এটি চালু হতে চলেছে বাংলায়। বিগত ২০০৫-এর ১৫ই আগস্ট দেশের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে প্রথম চালু হয় ডায়াল ১০৮ পরিষেবা। বর্তমানে দেশের অন্তত ২০টি রাজ্যে পিপিপি মডেলে চালু এই পরিষেবা। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পেরিয়েছে ১৪ই জুন। এখন স্বাস্থ্য ভবনে চলছে দরপত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া। স্বাস্থ্য কর্তাদের আশা, সাপে কাটা থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো আপৎকালীন পরিস্থিতি কিম্বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের সময়ে বহু প্রাণ বাঁচবে প্রস্তাবিত এই পরিষেবার সুবাদে। অন্ধ্রপ্রদেশে চালু হওয়ার পর ২০০৭ সাল নাগাদ মধ্যপ্রদেশ ও তার পর একের পর এক রাজ্যে ডায়াল ১০৮ পরিষেবা চালু হয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অম্বুমণি রামাদোসের উদ্যোগে। পরবর্তী সময়ে গুজরাত, অসম, ছত্তিসগড় গোয়া, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, সিকিম, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ-তে এই পরিষেবা কার্যকর হয়।
পাশাপাশি, স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ জায়গায় যে বেসরকারি সংস্থা ডায়াল ১০৮ সার্ভিস চালায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে, তাদের তরফে বাংলার সরকারের কাছেও আর্জি জানানো হয়েছিল এই পরিষেবা চালু করার জন্য। তার পর গত বছর জুনে এই ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। ওই বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার জিভি রামানা রাও বলেন, “বাংলায় এই ব্যবস্থা যে নেওয়া হচ্ছে, সেটা স্বাগত। আশা করি, আগামী ৩-৬ মাসের মধ্যে প্রকল্প কার্যকর করা যাবে। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, ঠিক হয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ হবে পরিষেবাটি চালু করার জন্য। তবে অ্যাম্বুল্যান্স ও সেটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন ইমার্জেন্সি মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনীশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তমরীশ কোলেও। তবে তাঁরা মনে করেন, পরিষেবা চালুর আগেই চিকিৎসক ও নার্স-সহ বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। রোগী পরিবহণের চেয়েও তাঁরা বেশি জোর দিচ্ছেন হাসপাতালে পৌঁছনোর ঢের আগে, পথেই গুরুতর অসুস্থের আপৎকালীন চিকিৎসার উপরে। তেমন ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের একাধিক সূত্র। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তবাহিকায় জমে থাকা রুট গলানোর ইঞ্জেকশন থেকে শুরু করে সাপে কাটার অ্যান্টি স্নেক ভেনম সিরাম কিংবা স্যালাইন, অক্সিজেন, ক্যাথিটার, সব কিছুরই ব্যবস্থা থাকবে অ্যাম্বুল্যান্সে। সাপে কাটার অ্যান্টিডোট ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আয়োজক স্নেহেন্দু কোনারের বক্তব্য, সাপে কাটার কয়েক মিনিটের মধ্যে এভিএস-টা অ্যাম্বুল্যান্সেই দেওয়া গেলে কিংবা অন্য বিভিন্ন অসুস্থতার ক্ষেত্রে জীবনদায়ী ইঞ্জেকশনের সাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্সেই জরুরি পদক্ষেপ নিলে আগামী দিনে এই ডায়াল ১০৮ সার্ভিসের কল্যাণে অনেক প্রাণ বাঁচবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।