প্রায় দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই চলছে শেষ লগ্নের প্রচার। তবে অস্বস্তি লেগেই রয়েছে গেরুয়াশিবির। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠাকুরনগরে মতুয়াদের মূল মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ওপরে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মতুয়া সমাজের একাংশ। এবার তাঁর সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিল দলের গোঁজ প্রার্থীরা। দেখা যাচ্ছে, শান্তনুর নির্বাচনী কেন্দ্রের মধ্যে পড়া গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির শতাধিক আসনে বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েছে দলেরই বিক্ষুব্ধ নেতারা। আর তাতেই প্রকট হয়ে গিয়েছে ওই এলাকায় বিজেপি গোষ্ঠীকোন্দল। মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশের ভোট এখনও রয়েছে বিজেপির সঙ্গে। কিন্তু অভিষেক-কাণ্ডে শান্তনু ঠাকুরের পদক্ষেপ এবং দলেরই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলেরই নেতাদের নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিজেপিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে অনেকটাই। বনগাঁ মহকুমা হোক কী কল্যাণী বা রানাঘাট মহকুমা, সেখানে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনও নতুন ঘটনা নয়। এই নিয়ে তিতিবিরক্ত দলের নিচুতলার কর্মী থেকে দলেরই সমর্থকেরা। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে সেই ৩ মহকুমা এলাকায় ২০-২৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় শতাধিক আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিজেপিরই গোঁজ প্রার্থীরা। অসংখ্য বুথে একাধিক কর্মী দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা দিলেও দল একজনকেই দলীয় প্রতীক দিয়েছে। ফলত নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন বাকিদের অনেকেই।
এবিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এইসব নির্দল প্রার্থীরা বিজেপির গলার কাঁটা হয়ে উঠতে চলেছে। যা তৃণমূলের সুবিধার কারণ হয়ে উঠতে পারে। বনগাঁ মহকুমায় রয়েছে ৩টি ব্লক। বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা। এই ৩টি ব্লকে রয়েছে মোট ৩৮টি পঞ্চায়েত। গ্রাম পঞ্চায়েত আসন সংখ্যা ৯২৪টি। বিজেপি এর মধ্যে ৮৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ৮৭টি আসনে তাঁদের প্রার্থী নেই। পঞ্চায়েত সমিতির আসন ১১৪টি। এর মধ্যে ১১২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তাঁরা। পাশাপাশি জেলা পরিষদের ৯টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে পদ্মশিবির। তবে গ্রাম পঞ্চয়েতের একই আসনে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন দেওয়ায় অস্বস্থিতে পড়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হলেও বেশ কিছু আসনে গোঁজ প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে ব্যর্থ হয়েছেন বিজেপির নেতারা। মহকুমার ৩টি ব্লকেই এই ছবি দেখা যাচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে একজনকে প্রতীক দেওয়া হলেও বাকিরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন লড়ছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই নির্দল-বিভ্রাটের নেপথ্যে রয়েছে শান্তনু ঠাকুরের রাজনীতি। কার্যত তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বনগাঁ, কল্যাণী ও রানাঘাট মহকুমা জুড়ে বিজেপির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন শান্তনুর অনুগামীরা। আড়ালে চলে গিয়েছেন দলের আদি নেতারা। এমনকী দলে গুরুত্বহীন অ-মতুয়া নেতারাও। শান্তনুর প্রতি ক্ষোভ থেকে তাঁরাই এখন নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভাল ফল না করলে ২৪’র যুদ্ধে জেতা যে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে শান্তনুর সামনে, তা বলাই বাহুল্য।