সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রতিভাবান ফুটবলার তিনি। গতবছর ইস্টবেঙ্গলের হতাশাজনক মরসুমে ক্লেটন সিলভা এবং তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রম। এবার ভারতীয় দলেরও বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন সেই মহেশ সিংহ। চলতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শনিবার রাতে নেপালের বিরুদ্ধে ৬১ মিনিটে তাঁর অসাধারণ পাস থেকেই ৯১তম আন্তর্জাতিক গোল করেছিলেন সুনীল ছেত্রী। ন’মিনিট পরে জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রথম গোল করলেন মহেশ। ম্যাচের পরে ভারতীয় দলের সহকারী কোচ মহেশ গাউলি জানান, ‘‘মহেশ অসাধারণ ফুটবলার। ওর অসাধারণ পাস থেকে সুনীল গোল করতেই ম্যাচের রং বদলে গিয়েছিল। ভারতীয় ফুটবলে মহেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’’ উল্লেখ্য, অসাধারণ ফুটবলের মতোই চমকপ্রদ মহেশের উত্থানের যাত্রা। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ২৪-২৫ কিলোমিটার দূরে নাম্বোল নওরেম গ্রামে বাড়ি তাঁর। মহেশের বাবা ইনগো কাঠের কাজ করে কোনও মতে সংসার চালাতেন। তাঁর নিজের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অকালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে। তাই চাইতেন মহেশকে ফুটবলার তৈরি করতে। গ্রামেরই এক দাদার কাছে ফুটবলের প্রথম পাঠ শুরু হয় তাঁর।
এরপর ছেলের উৎসাহ দেখে প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যেও মহেশকে তাঁর বাবা ভর্তি করে দিয়েছিলেন গ্রামের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। অল্প দিনের মধ্যেই নজর কেড়ে নেন তিনি। ডাক পান বীরচন্দ্র মেমোরিয়াল স্পোর্টিং ক্লাবে। মণিপুরের এই প্রতিষ্ঠান থেকেই উঠে এসেছেন সুরেশ সিংহ, রোশন সিংহের মতো তারকারা। বীরচন্দ্র ক্লাবে খেলতে খেলতেই সুযোগ পান শিলং লাজং এফসিতে। কিন্তু প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে আর্থিক অনটন। ছেলেকে ইনগো সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘তুমি মন দিয়ে খেলে যাও। আমি সব সামলে নেব।’’ মহেশ সব সময়ই বলেন, ‘‘দারিদ্রের সঙ্গে বাবার অদম্য লড়াই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ফুটবলার হয়ে উঠতে, ভাল খেলতে।’’ লাজংয়ের যুব দলে মাত্র একটা মরসুম খেলেই নজর কেড়ে নেন মহেশ। ২০১৮ সালে মূল দলে অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোল করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। তার পরে কেরল ব্লাস্টার্সে সই করেন। কিন্তু খেলার সুযোগ না পেয়ে যোগ দেন আই লিগের ক্লাবের সুদেবাতে। সেখান থেকেই বছর দু’য়েক আগে লোন-এ ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেন।
ক্লাব স্তরে ভাল খেলার সুবাদে এবছরই জাতীয় দলে অভিষেক ঘটান তিনি। ভুবনেশ্বরে আন্তঃমহাদেশীয় কাপ চলাকালীন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন মহেশের। শনিবার রাতে নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর থেকে রীতিমতো তারকার সম্মান পাচ্ছেন বছর চব্বিশের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার। যদিও মহেশ আশ্চর্যরকম উত্তেজনাহীন। নেপাল ম্যাচের পরে তাঁর জন্য সাংবাদিকরা অপেক্ষা করে থাকলেও কোনও কথা না বলে লাজুক হেসে টিম বাসে উঠে পড়েছিলেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের পরের খেলা কুয়েতের বিরুদ্ধে, মঙ্গলবার। ভারতীয় শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এখনও কুয়েত ম্যাচের জন্য চূড়ান্ত দল নির্বাচন করেননি কোচ ইগর স্তিমাচ। ইতিমধ্যেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়ায় ভারতের কাছে এই ম্যাচ নিয়মরক্ষার। যদিও সুনীলদের লক্ষ্য কুয়েতকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।এই কারণেই শক্তিশালী দল নামাতে চাইছেন ইগর, এমনটাই মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।