ফুসফুস প্রতিস্থাপনে আরও একবার তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করল কলকাতার মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। প্রথমবার গুজরাত থেকে আনা হয়েছিল ফুসফুস। মাঝরাতে গ্রিন করিডর করে ফুসফুস এসেছিল হাসপাতালে। পূর্ব ভারতে প্রথম কলকাতা শহরই ফুসফুস প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেয়েছিল। ফের একবার শহরে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেই লাঙ ট্রান্সপ্লান্টে এল বড় সাফল্য। সূত্রের খবর, এবারও ভিন রাজ্য থেকেই নিয়ে আসা হয়েছে ফুসফুস। রিজিয়োন্যাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা ৪৩ বছরের এক ব্যক্তি দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার পরে তাঁর ব্রেন ডেথ হয়ে যায়। অঙ্গদানে সম্মত হয় ওই ব্যক্তির পরিবার। এদিকে মেডিকা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ইকমো সাপোর্টে থাকা ১৪ বছরের এক কিশোরকে বাঁচানোর জন্য ফুসফুস দরকার ছিল চিকিৎসকদের। ইকমো হল ‘একস্ট্রা-কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন’ পদ্ধতি। একে ‘একস্ট্রা-কর্পোরিয়াল লাইফ সাপোর্ট’ বলা হয়। হার্ট ও ফুসফুসের রোগে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেন ডাক্তাররা। শ্বাসপ্রশ্বাসে যখন স্বাভাবিক ভাবে অক্সিজেন ঢুকতে পারে না শরীরে, এমন ভেন্টিলেটরের মতো যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও কাজ হয় না, তখন কৃত্রিমভাবে এই পদ্ধতিতে শরীরে অক্সিজেন ঢোকানো হয়। ভুবনেশ্বরে ব্রেন ডেথ রোগীর খবর পাওয়া মাত্র উড়িষ্যা চলে যান মেডিকার চিকিৎসকরা।
এরপর ব্রেন ডেথ রোগীর অপারেশনের পর ফুসফুস নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। শনিবার রাতে ফুসফুস শহরে পৌঁছনোর পর তা গ্রিন করিডর করে মেডিকা সুপারস্পেশালিটিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কিশোরের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় সেই ফুসফুস। কিশোরের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছেন মেডিকার চিকিৎসকরা। তবে ছেলেটিকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে চান তাঁরা। কলকাতায় তথা বাংলায় এতদিন ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় রোগীদের ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছিল। কারণ ডাক্তারবাবুরা বলছেন, হৃদপিণ্ড, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের থেকে অনেকটাই জটিল ফুসফুস প্রতিস্থাপন। প্রথমত ‘ব্রেন ডেথ’ ব্যক্তির ফুসফুস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রিন করিডর করে নিয়ে গিয়ে প্রতিস্থাপন করার দরকার পড়ে। হাতে সময় থাকে চার থেকে ছ’ঘণ্টা। প্রতিস্থাপনের জন্য পরিকাঠামো, হাসপাতালের সেটআপ এবং প্রতিস্থাপন পরবর্তী সময় রোগীর শরীরে যে ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, এইসব কিছুর ঘাটতি ছিল কলকাতায়। তবে এখন এই জটিল অস্ত্রোপচারও শহরে সফলভাবে হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এবার থেকে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া হবে কলকাতাতেই। তার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার ও অস্ত্রোপচারের সবরকম পরিকাঠামো প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসার আর ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না রোগীদের।