এখনও কাটেনি করমণ্ডল-এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার রেশ। তিন সপ্তাহ পর এখনও ৮১টি দেহ পড়ে রয়েছে ভুবনেশ্বর এইমসের ফ্রিজারে। চলছে দেহ শনাক্তকরণের কাজ। আর তা করতে গিয়েই প্রতি পদেই নিত্যনতুন অঙ্ক উঠে আসছে কর্তৃপক্ষের কাছে। সূত্রের খবর, ১৩টি দেহের দাবিদার ছত্রিশ পরিবার। মানে, দেহপিছু তিনটি। ৪১টি দেহের দাবিদার মোট ৮৪জন। ৪০টি মতো দেহ বেওয়ারিশ, তাদের দাবিদার কেউ নেই। ১৩টির দাবিদার সবথেকে বেশি, ৩৬টি পরিবার। দেহ শনাক্তকরণের কাজ করতে ৪১টি মৃতদেহ এবং তার দাবিদার ৮৪ জনের ডিএনএ-র নমুনা পাঠানো হয়েছে দিল্লির সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবেরটরিতে (সিএফএসএল)। সেই রিপোর্ট এলেই হয়তো কিছু দেহ শনাক্তকরণের কাজ হবে। কবে সেই রিপোর্ট আসবে তা অবশ্য জানাতে পারছে না এইমস কর্তৃপক্ষ। তবে ১৩ দেহের যে ৩৬ দাবিদার তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরও বিপত্তি হয়েছে একাধিক মৃত ব্যক্তির দাঁত খৈনি, গুটখা খেয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। ডিএনএ পরীক্ষাতেও সমস্যা হচ্ছে তাঁদের ক্ষেত্রে। গত ২রা জুন উড়িষ্যায় বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০-র কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে এখনও ৮১ জনের দেহ শনাক্ত হয়নি। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেহের জন্য দাবিদার পরিজনের ডিএনএ-র নমুনা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তা মিলে গেলে দেহটি পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর এইমসে এই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজ হয়েছে। নমুনা গিয়েছে দিল্লীতে। এদিকে রেলসূত্রে খবর, দুর্ঘটনায় শনাক্ত না হওয়া দেহগুলির জন্যে অনেক ক্ষেত্রেই একাধিক দাবিদার আসছেন। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে শুরু হয়েছে জটিলতা। কোনও কোনও দেহের ছ’সাত জন দাবিদারও এসেছেন বলে খবর। ফলে তা নিয়ে রেলকর্তারা পড়েছেন সমস্যায়। ভুবনেশ্বর এইমস সূত্রে খবর, মূলত বাংলা ও বিহারেরই মানুষজন এই দেহগুলো শনাক্তকরণের জন্য যাচ্ছেন। কিছু লোক আছেন উড়িষ্যার। তবে তা সামান্যই। এক আধিকারিকের কথায়, হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ৪০টি দেহ এতটাই বিকৃত অবস্থায় রয়েছে, যে সেগুলো কেউ শনাক্ত করার দাবিও জানাচ্ছেন না। ফলে এই দেহগুলো পড়েই রয়েছে। এগুলোর আর কোনও ডিএনএ পরীক্ষা এখনই হচ্ছে না। কারণ কেউ দাবি না জানালে পরীক্ষা করার কোনও কারণ নেই। এগুলোর ভবিষ্যৎ কী তা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না কেউ। জানানো হয়েছে, প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। গত ২রা জুন বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটে। আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, মেন লাইন থেকে আচমকাই লুপ লাইনে ঢুকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যায় করমণ্ডলের ২১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। সেই সময় ডাউন লাইন দিয়ে যাচ্ছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনেরও তিনটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০-র কাছাকাছি যাত্রী মারা গিয়েছেন। তারমধ্যে ৮১ জনের দেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।