আগামী বছরই দেশে লোকসভা নির্বাচন। আর সেদিকে তাকিয়েই জোটের সলতে পাকাতে শুক্রবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পাটনার বাড়িতে বৈঠকে বসে দেশের ১৫টি বিরোধী দল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লাও। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে, জম্মু-কাশ্মীরের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলছেন, শুনে ভাল লাগল। তবে জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র না থাকার কারণ কী?’ ওমরের এই প্রশ্নটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে শেষবারের মতো জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার ভোট হয়েছিল। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর— পাঁচ দফায় ভোট হয়। জম্মু-কাশ্মীর তখন পূর্ণাঙ্গ রাজ্য ছিল। ফলাফল ঘোষণার পর পিডিপি ও বিজেপি হাতে হাত মিলিয়ে জোট সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের পতন ঘটে। পরদিন থেকে শুরু হয় কেন্দ্রীয় শাসন। গত ২০ জুন ছিল সেই অর্থে কেন্দ্রীয় শাসনের পঞ্চম বর্ষপূর্তি।
এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর, দ্বিখণ্ডিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ওই সিদ্ধান্ত ছাড়াও কেড়ে নেওয়া হয় প্রাক্তন রাজ্যটির বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা। খারিজ করে দেওয়া হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভার বিলোপ অবশ্য ঘটানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রতিশ্রুতিও বারবার দিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে বিধানসভার ভোট হবে। রাজ্যের মর্যাদাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাঁচ বছর কেটে গেলেও সেই দুই প্রতিশ্রুতির একটিও এখনও পূরণ হয়নি।
বিরোধীদের জোট ‘গুপকর অ্যালায়েন্সের’ সব নেতাই অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি করেছেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহর অভিযোগ, ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার বুঝতে পারছে, ভোট হলে বিজেপির পরাজয় অনিবার্য। জন্মু-কাশ্মীরে ভোট কবে হবে, তা যেমন অজানা, তেমনই কারও জানা নেই, সাংবিধানিক মর্যাদা খারিজ ও রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে।
জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে এখন শান্তি, সুস্থিতি ও প্রগতির স্বর্ণযুগ চলছে। যদিও কবে নাগাদ ভোট হবে, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিতই তিনি দেননি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আগামী বছর লোকসভা ভোট। আর তাই তার আগে কোনও ভাবেই জম্মু-কাশ্মীরে ভোট করাতে চায় না মোদী সরকার। কারণ, ভোটে জিতে বিরোধীরা সেখানে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়লে কেন্দ্রের যাবতীয় দাবি ও বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি বিফলে যাবে। তাছাড়া, এত কিছুর পরও জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে না পারলে দিনশেষে তাদেরই মুখ পুড়বে।