সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটবিশ্বে অন্যতম বহুলচর্চিত বিষয় হল ‘বাজবল’। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের প্রশিক্ষণাধীন ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নতুন আগ্রাসী ধরনকেই অভিহিত করা হচ্ছে এই নামে। তবে চলতি অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পরে কাঠগড়ায় উঠেছে ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ ক্রিকেট। বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত আগ্রাসনের সঙ্গে খেলতে গিয়েই হেরেছে বেন স্টোকসের দল। কিন্তু ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম বলে দিচ্ছেন, তাঁদের খেলার ধরনে কোনও ভুল নেই। পাশাপাশি, দলের ব্যাটসম্যান জ্যাক ক্রলির মন্তব্য, তাঁরা দর্শকদের আনন্দ দিতেই ক্রিকেট খেলেন। জেতা-হারার ব্যাপারটা নিয়ে তাঁরা বেশি ভাবেন না। অর্থাৎ, ইংল্যান্ড বুঝিয়ে দিচ্ছে, সমালোচনা যতই হোক না কেন, ‘বাজবল’ ক্রিকেট থেকে সরছে না তারা। লাল বলের ক্রিকেটে বেন স্টোকসদের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নিজের এই আগ্রাসী মানসিকতা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন ম্যাকালাম। নিউ জিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের ডাকনাম ‘বাজ’। যে কারণে ম্যাকালামের মতাদর্শের এই ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘বাজবল’ নামে। যে ক্রিকেট খেলে অতীতে প্রচুর সাফল্য পেয়েছে ইংরেজ শিবির।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের সাংবাদিকদের ম্যাকালাম বলেছেন, ‘‘আমরা যে ভাবে খেলেছি, তাতে বোঝা গিয়েছে, আমাদের পদ্ধতিটা ঠিক। যদি ভাগ্যের একটু সাহায্য পেতাম, তা হলে প্রথম টেস্টটা আমরা হয়তো জিততে পারতাম।’’ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের এই দ্বৈরথকে হেভিওয়েট বক্সিংয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন ম্যাকালাম। জানিয়েছেন, দু’জন বক্সারই যে একই ভাবে লড়াই করবেন, তার কোনও মানে নেই। ম্যাকালাম মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া তাদের ‘সতর্ক ক্রিকেট’ থেকে সরে আসবে না। এবং ইংল্যান্ড আরও আগ্রাসী খেলবে। ইংল্যান্ডের কোচের কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়া ওদের রণকৌশলই ধরে রাখবে। যেটা খুবই ভাল হবে। কারণ, আমরা তা হলে আর একটু আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে পারব।’’ যোগ করেন, ‘‘সামনের কয়েক সপ্তাহ আমরা বেশ উত্তেজক ক্রিকেট দেখতে পাব বলেই আশা করছি।’’ এজবাস্টন টেস্টের পরে স্টোকস জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রথম দিনে ডিক্লেয়ার করে দেওয়া নিয়ে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। ম্যাকালামও তাঁর অধিনায়কের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ‘‘আমরা সব সময় খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। যদি মনে হয় কোনও সময় প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা যাবে, তা হলে আমরা সেই সুযোগটা কাজে লাগানোর জন্য ঝাঁপাই। আমি আর ক্যাপ্টেন, দু’জনেই মনে করি, এতেই জেতার সবচেয়ে বড় সুযোগ থাকে’’, স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের কোচ পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা দর্শকদের আনন্দ দিতেই ক্রিকেট খেলেন। এবং, সেই দর্শনই ধরে রাখবেন। একই কথা শোনা গিয়েছে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান জ়াক ক্রলির মুখেও। ক্রলি বলেছেন, ‘‘আমরা ফলের কথা ভেবে ক্রিকেট খেলি না। আমাদের লক্ষ্য থাকে দর্শকদের আনন্দ দেওয়া। আমরা সব সময় নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে কথা বলে থাকি।’’ ক্রলি আরও বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমরা মাঠে নামি জেতার জন্য। জিতলে আমাদের ক্রিকেট দর্শনের গুরুত্ব আরও বাড়বে। সেটা আমাদের মাথায় থাকে।’’ এজবাস্টন টেস্টে হারলেও ক্রলি মনে করেন, তাঁদের সম্মান হারায়নি। বরং, তাঁদের কিছু প্রাপ্তিই হয়েছে। ক্রলির কথায়, ‘‘এজবাস্টনে আমরা কিন্তু কিছু খোয়াইনি। শুধু একটা ক্রিকেট ম্যাচ হেরেছি। তাও সেটা পাঁচ ম্যাচের একটা সিরিজ়ের খেলায়। আমি তো বলব, আমরা যে ধরনের ক্রিকেট খেলছি, সেটাকে অনেকেই সমর্থন করছে, সম্মানও করছে। এতে ক্রিকেটই লাভবান হবে।’’ আগামী ২৮শে জুন থেকে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে লর্ডসে।