নেহাতই ছাপোষা জীবনযাপন তাঁর। নিত্যসঙ্গী খড়ের চাল, মাটির দেওয়াল, ও ছোট্ট একফালি ঘর। সেই ঘরের মধ্যেই সপরিবারে বসবাস, রান্নার কাজ। এভাবেই দিন কাটান কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জাগু প্রধান। তিনি সরকারি আবাস যোজনায় অনুদান পাওয়ার যোগ্য। একথা বলেন জাগুদেবীর প্রতিবেশীরাই। তবুও জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন তিনি সেই সুযোগ নেবেন না বলেই স্থির করেছেন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৮ নম্বর আসনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ভোটে লড়ছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই যথারীতি প্রচারে নেমেছেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাগুদেবীর স্বামী অলোক প্রধানের এসটিকেকে রোডের ধারে একটি গুমটি দোকান রয়েছে। টুকিটাকি স্টেশনারি জিনিসপত্র বিক্রি করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে কৃষ্ণ প্রধান একটি হোটেলে কাজ করেন। স্বামী ও ছেলের আয় দিয়ে কোনওরকমে সংসার চলে। আগে বাড়িতে দুটো গরু ছিল। দুধ বিক্রি করে কিছু আয় হত। তবে মাস সাতেক আগে মেয়ের বিয়ের জন্য ওই গরু দুটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে বলে জানান জাগুদেবী।
উল্লেখ্য, জাগুদেবীর স্বামী অলোকবাবুর আগে বাড়ি ছিল কাটোয়ার শ্রীবাটি গ্রামে। অলোকবাবু বরাবরই দক্ষিণপন্থী দলের সমর্থক ছিলেন। ২০০০ সাল নাগাদ শ্রীবাটি গ্রামে সিপিএমের লোকজনদের কোপের মুখে পড়ে তিনি যমুনাপাতাই গ্রামে উঠে আসেন। সামান্য কিছু জায়গা কিনে এই মাটির ঘর তৈরি করেছিলেন। তবে বর্তমানে বসতঘরের অবস্থা খারাপ। বর্ষায় জল পড়ে। সেজন্য দলের কয়েকজনই তাদের সরকারি আবাস যোজনায় ঘরের অনুদান নেওয়ার প্রস্তাব দেন। জাগুদেবী বলেন, “আমার এলাকার কিছু গরিব পরিবারের আবাস যোজনায় ঘর দিতে বাকি আছে। আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে তাদের আগে অনুদান নিই কী করে? এখন খড়ের চালের ঘরে ভালই থাকি। আমাদের চেয়ে যাদের আরও বেশি প্রয়োজন তাঁরা আগে পান, এটাই চাই।” এসটিকেকে রোড থেকে দু’ কিমি দূরে জাগুদেবীর বাড়ি। ২০১৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করে। তবে তখন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। তাঁকে সহ- সভাপতির পদ দেওয়া হয়। সহ-সভাপতি হিসাবে তিনিও সরকারি গাড়ি পেতে পারেন। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, পঞ্চায়েত সমিতি অফিসে যাতায়াতের সময় তিনি কোনওদিনই গাড়ি নেননি। রোজ পায়ে হেঁটে সাহেবতলা স্টেশনে যান। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে দাঁইহাটে পঞ্চায়েত সমিতির অফিস। এটাই তাঁর রোজনামচা। জাগুদেবীর প্রশংসায় মুখর পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। “জাগু প্রধানদের পরিবার মূলত দুস্থ পরিবার। তিনি নিজে অত্যন্ত সৎ ও কর্মঠ। আমাদের দল তাই তাঁকে এবারেও প্রার্থী করেছে”, জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু।