মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশবাসীর বাকস্বাধীনতা। রাষ্ট্রীয় কোপের কবল থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। সমাজমাধ্যমে কেউ সরকারের সমালোচনামূলক মন্তব্য করার পর সেখানেও নেমে এসেছে আঘাত। এবার ফের তেমন ঘটনার ছায়া পড়ল দেশে। বিজেপিশাসিত মণিপুরে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনজাতি সংগঠনের টুইটার হ্যান্ডল ব্লক করে দেওয়া হল। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশেই ওই হ্যান্ডলটি ‘ব্লক’ করে দিয়েছেন টুইটার কর্তৃপক্ষ। টুইটার হ্যান্ডলটি খুললেই একটি নোটিশ দেখা যাচ্ছে, যেখানে লেখা রয়েছে, আইনগত দাবি মেনে ভারতে এই টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে শোরগোল। চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। এমতাবস্থায় মণিপুর সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কন্ঠরোধের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে জনজাতি সংগঠনটি। মণিপুরের কুকি-জো জনগোষ্ঠীদের সংগঠন ইনডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম (আইটিএলএফ) বেশ কয়েক বছর ধরেই তফসিলি জনজাতিদের অধিকার রক্ষার দাবিতে সরব হয়েছে। গত ৩ মে মণিপুরে অশান্তি শুরু হওয়া ইস্তক সমাজমাধ্যমে কুকিদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছে সংগঠনটি।
স্বাভাবিকভাবেই সেই সংগঠনের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। এই প্রসঙ্গে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষদের দাবিদাওয়াকে ধামাচাপা দিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। মণিপুর সরকার মেইতেই জনগোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতিহিংসায় উত্তপ্ত মণিপুর। এখনও জ্বলছে হিংসার আগুন। আতঙ্কে দিন গুজরান হচ্ছে সে রাজ্যের বাসিন্দাদের। প্রশ্নেয মুখে মণিপুরের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার। পাশাপাশি এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিস্পৃহতা দেখে তাঁর নিন্দায় সরব হয়েছে একাধিক মহল। গত ৩রা মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ই মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিল কেন্দ্র। এরপর নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। কিন্তু তাতে সুরাহা মেলেনি বিন্দুমাত্র।