আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল, অর্থাৎ শনিবার কালীঘাটে তাঁর বাড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলের কোর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। পাশে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, ভাঙড়ের নির্বাচনী দায়িত্বে সব্যসাচী দত্তকে নিযুক্ত করা। মনোনয়নপর্ব থেকে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় অশান্তি ও হিংসা বড় আকার নিয়েছে। ডোমকল, চোপড়া, ভাঙড়, ক্যানিং, মালদহ প্রভৃতি জায়গায় সংঘর্ষ, গুলি, বোমায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে এদিনের বৈঠকে তৃণমূল নেতৃত্ব হিসাব দিয়ে জানিয়েছে, বিরোধীরা রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সুতরাং মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ধোপে টেকে না। বিরোধীদের হাতে তৃণমূলের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলিও এ দিন দলের পর্যালোচনায় এসেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মমতার বক্তব্য, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বলা হয়েছিল, ‘বদলা নয়, বদল চাই।’ দল তা মেনে চলেছে। কিন্তু বিরোধীরা পরিস্থিতি যে দিকে এগিয়ে নিতে চাইছে তাতে এ বার তৃণমূলকেও প্রতিরোধ করতে হবে বলে জানান তিনি। শুক্রবারই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে দলীয় সমাবেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য ‘মা-বোনেদের’ এগিয়ে যেতে বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁদের উদ্দেশে মমতার বার্তা ছিল, ‘হাতা-খুন্তি দিয়ে আলুভাজা, ফেনা ভাত আর আলুসিদ্ধ খাইয়ে দেওয়া’র।
পাশাপাশি, দলীয় সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে দলের অন্দরে আরও নির্দিষ্ট করে মহিলাদের প্রতিরোধের সামনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তা সংগঠিত করতে দলের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা এবং সাংসদ মালা রায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রসঙ্গত, ভাঙড়ের পরিস্থিতি কতটা উত্তপ্ত, সেই তথ্যও মুখ্যমন্ত্রীর সামনে আসে। তাঁকে বলা হয়, প্রতিবেশী একাধিক রাজ্য থেকে মাওবাদীরাও ওখানে ঘাঁটি গেড়েছে। তারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ সংগঠিত করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়। অবশেষে বিধাননগরের পুর চেয়ারম্যান সব্যসাচীকে ভাঙড়ে দলের নির্বাচনী দায়িত্ব দেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানকার ভারপ্রাপ্ত দলীয় বিধায়ক শওকতকে সব ব্যাপারে সব্যসাচীকে অবহিত করে এগোতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদিবাসী সংগঠন ও তাঁদের বিষয়গুলি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে। এদিনের বৈঠকে সারা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তা নিয়ে মমতা জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তৃণমূলের কোনও মাথাব্যথা নেই। “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে রাজ্যের প্রায় সব বড় নির্বাচনই অনুষ্ঠিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা অন্য রাজ্যের তত্ত্বাবধানে। অন্য রাজ্যের বাহিনীর মতোই কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্য পুলিশের সঙ্গে মিলিত ভাবে কাজ করে। তাই তা নিয়ে তৃণমূলের কোনও চিন্তা নেই”, স্পষ্ট বক্তব্য মমতার।