ভারতীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ দুধের সঙ্গে জড়িয়ে। মিষ্টি, চা, কফি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সবেতেই দুধ অপরিহার্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুধের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিতে। আর সেই দিকটি নিয়ন্ত্রণ করাই বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে মোদী সরকারের জন্য। কিন্তু ২০২২-এর অক্টোবর থেকে ২০২৩-এর মার্চ পর্যন্ত দেশে দুধের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দুধ উৎপাদনকারী দেশ (১০ লক্ষ কোটি টাকা) ভারত এখন এক ধরনের সংকটের সম্মুখীন।
ছোট সমবায় এবং ব্যক্তিগত ডেয়ারিগুলি বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের ঘাটতি ৭-৮ শতাংশেরও বেশি। গোদরেজ জার্সির সিইও ভূপেন্দ্র সুরি বলেছেন, ‘আমরা সাধারণত নভেম্বর এবং জানুয়ারির মধ্যে ফ্লাশ পাই, তখনই উদ্বৃত্ত দুধ থাকে। গত বছর কোন ফ্লাশ ছিল না, এবং দুধের উৎপাদন কমে এসেছিল, আমরা দুধের ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিলাম।’
গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, রাজস্থান এবং বিহারের দুগ্ধ সমবায়গুলি সংগৃহীত দুধের ৬৫ শতাংশ সরবরাহ করে। কৃষি ও দুগ্ধ বিষয়ক পরামর্শদাতা আদিত্য ঝা-এর মতে, এ’বছর বেসরকারি ডেইরিগুলি মূলত নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপ থেকে ঘাটতি মেটাতে দুধের গুঁড়া আমদানি করছে। এর ফলে বাজারে দুগদ্ধ জাত পণ্যে দাম হু হু করে বাড়ছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকছে। সব মিলিয়ে দেশের দুগ্ধ শিল্প এখন সংকটের মুখে।
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দুধের এই সংকটের জন্য কেন্দ্রর মোদী সরকারকে দায়ী করেছে। স্রেফ নির্বাচনী সুবিধা পেতে একটি সমবায়কে অন্যটির সঙ্গে লড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্র। আর তাই এই পরিস্থিতি। ঐতিহাসিক ‘সাদা বিপ্লবে’র ৫০ বছরে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুধ উৎপাদনকারী দেশ ভারতকে আজ অন্য দেশ থেকে দুধ ও দুধজাত সামগ্রী আমদানি করতে হচ্ছে। কোভিড আমল থেকেই দুধ সংকটের সূত্রপাত। যা এই মুহূর্তে চরম আকার ধারণ করেছে।
খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গবাদিপশু খাওয়ানোর খরচ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। তাছাড়া বড় বাণিজ্যিক ফার্ম চালানো, গোপালনের জন্য পরিচর্যা, ওষুধ, চিকিৎসার খরচ বেড়ে গিয়েছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহণের খরচও অনেক বেশি বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দুধের দামে এগুলির প্রভাব পড়েছে। এর পাশাপাশি দুধ নিয়েও মোদী সরকার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। কর্ণাটকের পরিসর ছাড়িয়ে আমূল-বিতর্ক তামিলনাড়ুতেও।
সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তামিলনাড়ু-সহ দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলি থেকে আমূল যাতে দুধ সংগ্রহ করতে না পারে, অবিলম্বে সে বিষয়ে নির্দেশ জারি করুন।’ ডিএমকে প্রধানের অভিযোগ, ‘এলাকাভিত্তিক দুগ্ধ সংগ্রহের নীতি লঙ্ঘন করে আমূল অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি করেছে।’ কেন্দ্রের দেওয়া ‘মাল্টি-স্টেট কো-অপারেটিভ লাইসেন্স’-এর সুবিধা নিয়ে গুজরাতের সংস্থা আমূল কৃষ্ণগিরি জেলায় ‘চিলিং সেন্টার’ এবং একটি ‘দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র’ বানিয়ে ফেলেছে বলেও জানিয়েছেন স্ট্যালিন।