চলতি অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য বাজেট পেশ করতে গিয়ে কর মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অবশ্য তার পিছনের মূল পরিকল্পনা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার দেখা গেল, মুখ্যমন্ত্রীর সেই উদ্যোগ রাজ্যের কোষাগারে বাড়তি টাকা আনার পথ অনেকটাই প্রসারিত করেছে। সেইমতো যেসব সংস্থার কর সংক্রান্ত মামলা বিভিন্ন ট্রাইবুনাল বা কোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে, তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে মীমাংসায় আসতে পারার সুযোগ পেয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিলেই কর সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তির সুযোগও তৈরি হয়। এখন দেখা যাচ্ছে রাজ্যের সেই প্রস্তাবে বিপুল সাড়া পড়েছে বাংলা জুড়ে। এখনও পর্যন্ত এই স্কিমে তাদের কর সংক্রান্ত মীমাংসা করেছে ১২ হাজারেরও বেশি সংস্থা।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবর্ষের বাজেট পেশের সময় চন্দ্রিমা ঘোষণা করেছিলেন, জিএসটি চালুর আগে কর সংক্রান্ত যে বিরোধগুলি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি, সেগুলির বকেয়া করের ১৫ শতাংশ মেটালে সংস্থাগুলির কর মীমাংসিত বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে ওই সংস্থাগুলি তাদের আর্থিক বিবরণী আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ রাখতে পারবে। এই কর মীমাংসিত হলে শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনেকটাই আর্থিক চাপ থেকেও মুক্তি দেবে। ভ্যাট, সিএসটি, সেলস ট্যাক্স প্রভৃতির ক্ষেত্রে এভাবে বিরোধের মীমাংসা করা যাবে মাত্র ১৫ শতাংশ কর মিটিয়ে। এক্ষেত্রে পেনাল্টি, ইন্টারেস্ট, লেট ফি বাবদ যেটুকু বকেয়া আছে, সেখানেও ১০০ শতাংশ রেহাইয়ের সুযোগ পাবেন করদাতারা। এন্ট্রি ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও বকেয়া করের ৫০ শতাংশ মেটালেই মীমাংসা সম্ভব হবে। ভ্যাট, সিএসটি, সেলস ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও পেনাল্টি ও অন্যান্য বকেয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলিও রাজ্য সরকারের এই স্কিমের আওতায় আসতে পারবে। সেক্ষেত্রে কর বকেয়া রাখার জন্য যে পেনাল্টি দেওয়ার কথা, তার ২ শতাংশ বা ১৫ হাজার টাকা, দু’য়ের মধ্যে যেটি কম, সেটুকু মিটিয়ে দিলেই হবে বলে জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি, নবান্ন সূত্র অনুযায়ী, বিভিন্ন ট্রাইবুনাল ও কার্টে এখনও প্রায় ২৫ হাজার মামলা ঝুলে আছে। সেগুলিরই নিষ্পত্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে ৩১শে মে পর্যন্ত এর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তা চলতি মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখনও পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে এই স্কিমে। নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, এক্ষেত্রে কতটা রাজস্ব এল, তা বড় কথা নয়। মামলাগুলির মীমাংসা না-হলে সরকারকে তার দিকে নজর দিতে হয়। তাতে কর আদায়ের দক্ষতা কমে। GST চালুর পরে দেশের আর কোনও রাজ্যই আগেকার কর ব্যবস্থা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাচ্ছে না। কিন্তু আগেকার কর ব্যবস্থায় প্রচুর মামলা ঝুলে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সব মামলার ক্ষেত্রেই মীমাংসার পথে হাঁটার রাস্তা দেখান যাতে সংস্থাগুলি মামলা থেকে রেহাই পায় আবার রাজ্যের কোষাগারেও টাকা আসে। দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ১২ হাজারেরও বেশি সংস্থা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যেই কর সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলেছে। এদের বেশিরভাগই ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প। প্রকল্পটি চালু থাকবে আগামী ৩০শে জুন পর্যন্ত। আইনি পরামর্শ নিয়ে এবার বড় সংস্থাগুলিও এই স্কিমে আসবে। সেক্ষেত্রে স্কিমের মেয়াদ চলতি অর্থবর্ষের শেষ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে বলে আশাবাদী অর্থদফতরের কর্তারা।