আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এখন থেকে রাজ্যের তরফে বাংলায় অবস্থিত যে কোনো ফ্ল্যাটের মালিক পেতে চলেছেন সেই জমির পরচা। তবে ভাড়াটেরা সেই পরচা পাবেন না। এমনকী ফ্ল্যাটের মালিকানা সত্ত্ব নিয়ে কোনও বিবাদ চললে ও তা নিয়ে মামলা চললেও সেই পরচা পাওয়া যাবে না। তবে এই সুবিধার আওতায় আসতে চলেছেন বাংলার একটা বড় অংশের মানুষ। রাজ্যের বহু মানুষ এখন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। শহরের বুকে তো বটেই, মফঃস্বলেও মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে ফ্ল্যাট। কিন্তু এতদিন লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলেও ফ্ল্যাট মালিক কোনও পরচা পেতেন না। অর্থাৎ, কেনা সম্পত্তির কোনও স্বীকৃতি ছিল না রাজ্যের ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের কাছে। এই কথা মাথায় রেখে এবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য পৃথক পরচা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই পরচার ভিত্তিতে ফ্ল্যাট মালিকরা ব্যক্তিগতভাবেই খাজনা মেটাতে পারবেন। সরকারি কর্তাদের আশা, এর ফলে খাজনা বাবদ সরকারের আয় যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি পরচার মতো শক্তিশালী নথি হাতে থাকায় ফ্ল্যাটের মালিকানাও আরও সুরক্ষিত হবে। এখন কেবল নির্দিষ্ট জমি বা ভূখণ্ডেরই পরচা হয়। এই নথি থাকার অর্থ, জমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরকারি তথ্যভাণ্ডারে স্থান পাওয়া। পরচায় জমির চরিত্র থেকে শুরু করে মাপ, সবটাই বর্ণিত থাকে। তাই সরকারিভাবে পরচাকেই আসল ল্যান্ড রেকর্ড বলে গণ্য করা হয়। পরচা অনুযায়ী প্রতি বছর সরকারের ঘরে খাজনা জমা করতে হয় কৃষিজমি ছাড়া প্রতিটি জমির মালিককে। এবার ফ্ল্যাট মালিকদের জন্যও কার্যকরী হতে চলেছে একই নিয়ম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফ্ল্যাট কিনলে দলিল, পুরসভার মিউটেশনের পাশাপাশি তৈরি হবে পরচা। ফ্ল্যাট মালিকের নাম ও তথ্য নথিভুক্ত হবে ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের তথ্যভাণ্ডারে। পরচার ভিত্তিতে নিজের মতো করে ফ্ল্যাটের খাজনা জমা দিতে পারবেন মালিক। ধরা যাক, ৪ একর জমির ওপর একটি ১০ তলা ফ্ল্যাটবাড়ি উঠল। সেখানে মোট ৮০টি ফ্ল্যাট তৈরি হল। ওই ৪ একর জমির পরচা আগে থেকেই রয়েছে। সেই অনুযায়ী ৮০টি ফ্ল্যাটের ৮০জন মালিক মিলে বা তাদের সোসাইটির মাধ্যমে টাকা তুলে খাজনা জমা দিচ্ছেন এখন। নয়া নিয়মে ওই ৮০টি ফ্ল্যাটের জন্য আলাদা আলাদা পরচা থাকবে। ফ্ল্যাটের সাইজ অনুযায়ী বিল্ডিংয়ের কমন সার্ভিস এরিয়া সমানুপাতিক হারে যুক্ত করে খাজনা নির্ধারিত হবে। সেই খাজনা সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটমালিক নিজেই জমা করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাতাকেই খাজনা দিয়ে যেতে হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, নয়া নিয়ম চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। খাজনা নির্ধারণের পদ্ধতির আরও সরলীকরণ দরকার। তাই ফের একবার মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কলকাতা পুরনিগম এলাকার ১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে এই নিয়ম চালু করতে গেলে কেএমসি অ্যাক্টে সংশোধনী আনতে হবে। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ফ্ল্যাটের চাহিদায় দেশের সমস্ত বড় শহরকে ছাপিয়ে গিয়েছে কলকাতা। ২০২৩ সালে এই শহরে তৈরি হবে ৩৬ হাজারেরও বেশি ফ্ল্যাট। রাজ্য সরকার স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় দেওয়ায় ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহও অনেক বেড়েছে। নতুন নিয়ম চালু হলে এই খাতে আয় বৃদ্ধির ঘটবে, এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।