মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলে থাকেন, এগিয়ে বাংলা। সেই দাবি যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, এবার ফের মিলল তার প্রমাণ। এবার মোদীর ভারতকে আবারও পিছনে ফেলে দিল মমতা রাজ্য। আর তাও সেই ঘটনা কিনা ধরা পড়ল খোদ কেন্দ্রীয় সমীক্ষার রিপোর্টেই! কেন্দ্র সরকার একটি সমীক্ষা করেছিল দেশজুড়ে সব রাজ্যেই। সেই সমীক্ষার বিষয় ছিল গত ৫ বছরে কোন রাজ্যের কত ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য নাম লেখাচ্ছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে গত অর্থবর্ষে বাংলায় সব মিলিয়ে রাজ্যে ভর্তি হয়েছিলেন ২৭ লক্ষ ১২ হাজার ১৩৮ জন। সেই হিসাবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ভর্তির অনুপাত দাঁড়িয়েছে ২৬.২৪। যেখানে জাতীয় গড়ের হার ৬ শতাংশের মতো।
স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার পড়ুয়াদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, এখনকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষার মান বাড়ছে সেটা এখন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই বৃদ্ধির পিছনে একটা বড় ভূমিকা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা কন্যাশ্রী প্রকল্প, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প, স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপ ও ঐক্যশ্রী প্রকল্প। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের করা সমীক্ষার বিষয় ছিল ১৮ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে থাকা কত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন প্রতিটি রাজ্যে তার অনুপাত বের করা। সেখানেই দেখা যাচ্ছে ২০২২-’২৩ বর্ষে এই রাজ্যের প্রায় ২৩ শতাংশেরও বেশি পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরে বৃদ্ধি এতটা হয়নি। প্রতি বছর দেখা যায় রাজ্যজুড়ে অন্তত ৩০ শতাংশ আসন খালি থেকে গিয়েছে নানা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু কত পড়ুয়া ভর্তি হলেন, সেই বিষয়টি বিচার করলে দেখা যাচ্ছে অনেকটাই ভাল পরিস্থিতি আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে। বিগত পাঁচ বছর ধরে মোট ভর্তির অনুপাতও ধাপে ধাপে বেড়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলায় মোট ভর্তির অনুপাত বৃদ্ধির হার এতটা বেশি কেন? রাজ্যের শিক্ষামহলের দাবি, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ার কারণে ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে যেমন ঠিক, তেমনই এখন ছাত্রছাত্রীরা যেরকম কোর্স চাইছেন তার অনেকগুলি বাংলার নানা সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি দূরশিক্ষার মাধ্যমেও এখন অনেকে ভর্তি হচ্ছেন।
তাছাড়া বাংলায় পড়াশোনার মান অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক ভাল। তাই বাইরে না গিয়ে ছেলেমেয়েরা এখানেই ভর্তি হচ্ছেন। আবার আরেকটা কারণ হতে পারে, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া পড়ুয়াদের সংখ্যাও অনেকটা বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ এখানকার প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হচ্ছেন। তবে সব থেকে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের ৪টি প্রকল্পের জন্য আর্থিক সাহায্য। আগে দেখা যেত আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই উচ্চশিক্ষার পথে এগোতে পারছেন না। তা সে তাঁর যতই যোগ্যতা থাকুক বা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ থাকুক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক প্রকল্প মেয়েদের ক্ষেত্রে স্কুলছুট আটকেছে। বাল্য বিবাহ কমেছে। মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর অবধি ছাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। সংখ্যালঘু সমাজেরও অনেক পড়ুয়া এখন রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় উচ্চশিক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে।