গত ২রা জুন উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। প্রাণ হারান ৩০০-এর কাছাকাছি মানুষ। সেই বিভীষিকা এখনও স্তিমিত হয়নি। এর মধ্যেই গরমের ছুটির শেষে খুলতে চলেছে বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার হাই স্কুল। তবে আগের মতো স্কুলে আসতে চাইছে না খুদে পড়ুয়ারা। আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। অভিভাবকরাও যেন প্রাণে ধরে নিজেদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সাহস করছেন না। ট্রেন দুর্ঘটনার পর এই বাহানাগা হাই স্কুলের একটি ঘরেই রাখা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলি। শেষে বাধ্য হয়ে স্কুলের পুরনো বিল্ডিং ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখানে নতুন বিল্ডিং গড়া হবে।
প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার পর অগুনতি মৃতদেহ পড়ে ছিল লাইন জুড়ে, বগিতে। সেগুলি রাখার জন্য প্রাথমিকভাবে বাহানাগার এই স্কুলটিকে বেছে নেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। দেহগুলিকে এনে রাখা হয়েছিল শ্রেণিকক্ষে। ধীরে ধীরে মৃতদেহ শনাক্ত করার পর পরিবার-পরিজনদের হাতে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। লাশের সে রক্তের দাগ শুকিয়ে জমে গিয়েছিল স্কুলের মেঝে জুড়ে। মৃতদেহের দুর্গন্ধও একটা সময় গ্রাস করেছিল গোটা স্কুলকে। সেসব এখন আর নেই। দিনরাত কাজ করে স্কুলটিকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু আতঙ্ক, সে তো এত সহজে যাওয়ার নয়। স্কুলে দুর্ঘটনায় নিহতদের দেহ রাখা হচ্ছে, এমন কথা কানে আসার পরেই প্রমাদ গুনেছিলেন অভিভাবকরা। এরপর পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানোর মতো ভরসা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। শিক্ষকরা আশ্বস্ত করছেন, যে শ্রেণিকক্ষে মৃতদেহ রাখা হয়েছিল, স্কুল খোলার পর পর তার কোনও চিহ্নই থাকবে না। কিন্তু তাতেও আতঙ্ক কাটছে না পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের মধ্যে। অনেকেই আর আগের মতো স্কুলে আসতে চাইছে না। অভিভাবকরা চাইছেন, ভেঙে ফেলা হোক পুরনো ওই স্কুলবাড়ি।
এপ্রসঙ্গে বাহানাগা বাজার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রমিলা সোয়াইন বলছিলেন, “পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। আমরা স্কুলে পুজো-অর্চনা করার পরিকল্পনা করেছি, তাতে যদি ভয় কাটানো যায়।” তবে বালেশ্বরের জেলাশাসক দত্তাত্রেয় ভাউসাহেব শিণ্ডে জানিয়েছেন, “স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এবং স্থানীয়রা স্কুলের ওই পুরনো বিল্ডিং ভেঙে ফেলে নতুন করে বিল্ডিং তৈরি করাতে চাইছেন। যাতে পড়ুয়াদের মধ্যে কোনওরকম ভয় না থাকে।” শোনা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসন সেই দাবি মেনে নিয়ে পুরনো বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং তৈরির ব্যাপারে মনস্থির করেছে। এমনিতেও স্কুলবাড়িটি পুরনো ছিল। বন্যার সময় মানুষ ওখানে আশ্রয় নেয়। তাই সেটিকে ভেঙে নতুন করে করার পরিকল্পনা রয়েছে, সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে এমনটাই।