কঠোর পদক্ষেপের পথে হাঁটলেন রাজ্যের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, বহুদিন ধরেই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) বিরুদ্ধে লুট চালানোর অভিযোগ উঠছে। কাজেই এবার তা আটকাতে রাজ্য পুলিশকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নেবার কথাও বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার নবান্নে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ কর্মসূচি ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে বলব, বিএসএফ এখন মানুষের কাছে গিয়ে অত্যাচার করছে। আপনারা তাদের অ্যালাও করবেন না। সব লুট করছে, কেড়ে নিচ্ছে। সেগুলোর সিজার লিস্ট দেওয়া হচ্ছে না। আগে কোনও জায়গার তল্লাশি চালিয়ে কিছু বাজেয়াপ্ত করলে একটা সিজার লিস্ট দেওয়া হত। কিন্তু এখন কোনও জায়গায় সিজার লিস্ট পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না।’’ এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ‘‘বগটুই থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় আমি শুনেছি তাদের সব কিছু নিয়ে চলে গিয়েছে। সেগুলো তারা কবে ফেরত পাবে তা আমরা জানি না। ভোট আসছে মানে এমনটা নয় যে সাধারণ মানুষের সব টাকা কেড়ে নিতে হবে। কালো টাকা অবশ্যই উদ্ধার হোক। তা বলে বাড়িতে যা আছে সব কিছু নিয়ে যাবে?’’, প্রশ্ন মমতার।
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী জানান ‘‘কেউ হয়তো হাসপাতালের জন্য টাকা নিয়ে যেতে পারে। কেউ বা জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে বাড়িতে টাকা রেখেছে। কেউ কেউ আবার ব্যাঙ্ক থেকে তুলেও বাড়িতে রাখে তা-ও কালো টাকা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে মানুষের টাকা নিয়ে নেওয়ায় মানুষ ভীতির মধ্যে আছে। দেশে একটি ভয়ের আবহাওয়া রয়েছে।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশকে বেশ কিছু নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমাদের পুলিশের দায়িত্ব নিতে হবে। কোনখানে কার বাড়ি থেকে কত টাকা নিচ্ছে, কী নিচ্ছে তার একটা সিজার লিস্ট চাওয়া, দরকার হলে তার একটা ডেটা ব্যাঙ্ক করে রাখা। এগুলো কোনও ভাবে ফেরত পাচ্ছে কি না সেগুলো দেখতে হবে। নাকি এগুলো সব লুট হয়ে যাচ্ছে এগুলো দেখার দায়িত্ব আমাদের।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘এক দিকে টাকা বন্ধ করে দিচ্ছে, অন্য দিকে আমজনতার টাকা লুট করে নিচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ, ইন্টেলিজেন্স বিভাগ, সিআইডি-কে সজাগ থাকতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বিএসএফের এক্তিয়ারের সীমানা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সীমানার পরিমাণ ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা। সেই থেকেই তাঁর নিশানায় বিএসএফ। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডিকেও একহাত নিতে ভোলেননি মমতা। সরব হন মণিপুরের হিংসা নিয়েও। ‘‘সিবিআই ও ইডি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে। তারা বিজেপি দলের জন্য কাজ করে না এটা মনে রাখতে হবে। তাদের হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু মনে রাখতে হবে তাদের একটা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সেখানে কেউ গিয়েছে? না কি মণিপুরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে?’’ স্পষ্ট জানান মুখ্যমন্ত্রী।