আগামী বছরেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। আর সেদিকে তাকিয়ে গত ১ জুন থেকে মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তি পালন শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ন’বছরে কোন কোন ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে, গোটা মাস জুড়ে দেশের সর্বত্র তা প্রচারের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। এই রাজ্যেও একই পরিকল্পনা। কিন্তু ২ জুন উড়িষ্যার বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনার ফলে গোড়াতেই বদলে ফেলতে হয়েছে পরিকল্পনা। ২৮৮ জনের মৃত্যুর পরে রেলের সাফল্যগাথা বাদ দিয়েছিলেন রাজ্য নেতারা। বাকি সব বিষয়ে মোদীর সাফল্যগাথা প্রচার করা হলেও রেল প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তাঁরা। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহও কলকাতায় এসে সেই পথেই হাঁটলেন। সব বললেও বাদ দিলেন রেল।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পৌত্র সিদ্ধার্থ অতীতে রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক ছিলেন। পরে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী হন। এখন তিনি বিধায়ক এবং বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্রদের অন্যতম। মোদী সরকারের ন’বছর পূর্তির কর্মসূচিতেই মঙ্গলবার কলকাতায় আসেন। পরিকল্পনামাফিক তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। সিদ্ধার্থের বিষয় ছিল, পরিবহণ ক্ষেত্রে মোদী সরকার কী কী করেছে তা তুলে ধরা। তিনি জাতীয় সড়ক, বিমানবন্দর, জলপথ নির্মাণ থেকে বিজেপি জমানায় দেশের মেট্রো রেলের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু দেশের পরিবহণের বৃহত্তম ক্ষেত্র রেলকে সযত্নে এড়িয়ে গেলেন।
বিজেপি দাবি করে, মোদী জমানায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে রেলের। এই সময়ে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, বন্দেভারত এক্সপ্রেসের মতো দ্রুত গতির ট্রেন এসেছে। কিন্তু সে সব নিয়ে একটিও কথা বললেন না সিদ্ধার্থ। আসলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃতদের একটা বড় অংশ বাংলার। জখমও অনেকে। এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেলের সাম্প্রতিক অনেক ত্রুটি বা সমস্যার কথাও সামনে চলে এসেছে। আর সেই পরিস্থিতিতে এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতেই আসরে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার প্রাক্তন রেলমন্ত্রীও। তবে কি বিষয়টা বাংলার ক্ষেত্রে ‘স্পর্শকাতর’ এবং ‘রাজনৈতিক’ বলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা? সেই কারণেই কি অন্য সব পরিবহণ ক্ষেত্রের কথা বললেও বাদ গেল রেল?
জবাবে সিদ্ধার্থ বলেন, ‘মোদী সরকারের সাফল্যের তালিকা তো অনেক লম্বা। তাই একসঙ্গে সব বলা সম্ভব নয়।’ কিন্তু সড়ক থেকে আকাশ ও জলপথের কথা বললেও শুধু রেলই বাদ কেন? আবারও প্রশ্নের জবাবে সিদ্ধার্থ বলেন, ‘আমি আগামিকাল (বুধবার) বিকেলে আরও একটি সাংবাদিক বৈঠক করব। সেখানেই রেলের ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলব ঠিক করে রেখেছি। এক দিনে তো সব বলে দেওয়া ঠিক নয়।’ যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতা যে ভাবে বিষয়টা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছেন তাতে বিজেপি অনেকটাই কোণঠাসা। বিজেপি নেতারাও আড়ালে এটাও মানছেন যে, মমতা সত্যিই চাপে ফেলে দিয়েছেন।
চাপটা শুধু রাজ্যে নয়, জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও। কারণ, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী হিসাবে মমতা যে সব প্রশ্ন তুলেছেন এবং তুলছেন তাতে সব বিরোধী দলই হাতে অস্ত্র পাচ্ছে। সোমবারই দুর্ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সামলানোর জন্য দার্জিলিং সফর বাতিল করেছেন মমতা। আগেই বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন। মঙ্গলবার ফের গিয়েছেন উড়িষ্যায়। কটক থেকে জানিয়েছেন, এখনও রাজ্যের ৩১ জনের কোনও সন্ধান মেলেনি। সিবিআই তদন্ত নিয়েও হালকা করে হলেও প্রশ্ন তুলে রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস এবং সাঁইথিয়া রেল দুর্ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক যুগ কেটে গেলেও সেই তদন্তের ফল যে প্রকাশ্যে আসেনি, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।