এখনও কাটেনি বিভীষিকার রেশ। সদ্য ঘটে যাওয়া করমণ্ডল এক্সপ্রেস-দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই যে বাঙালি, এ তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে ইতিমধ্যেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ। শুক্রবার সেখান থেকেই বহু মানুষ ছিলেন অভিশপ্ত ওই করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক, কেউ কেউ বা যাচ্ছিলেন চিকিৎসার উদ্দেশে। দুর্ঘটনার পর থেকে সেই জেলারই নানা এলাকায় এসে পৌঁছচ্ছে বিভিন্ন যাত্রীর খবর। উঠছে কান্নার রোল, আর্তনাদ। জানা গেছে, দুর্ঘটনার পরে চারদিন কেটে যাওয়ার পরেও এখনও ওই জেলার বাসিন্দা ১৩ জনের কোনও খোঁজ মেলেনি। তাঁরা আদৌ বেঁচে রয়েছেন, নাকি মারা গিয়েছেন, বলতে পারছে না কেউ। ক্ষীণ আশা বুকে নিয়ে উড়িষ্যার বিভিন্ন হাসপাতাল, মর্গে ঘুরছেন পরিবারের সদস্যরা।
আসা যাক কাকদ্বীপের মধুসুদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চৌষট্টিবাড়ি এলাকার কথায়। এই অঞ্চলের তিন যুবক মারা গিয়েছেন বলে আগেই খবর এসেছে। এই গ্রামের ৬ জনের এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি। তাঁরাও কি মারাই গেছেন, ভেবে আকুল পরিবার। উৎকণ্ঠা যেন বাঁধ মানছে না। কাকদ্বীপ ছাড়াও গোসাবা, সোনারপুর, জয়নগর, বাসন্তীর অনেকেরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের মধ্যে একজন বাসন্তীর সমর সর্দার। তিনি যে কামরায় ছিলেন, তা একেবারে উল্টে গিয়েছিল। পরে ওই কামরা থেকেই একটি মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়েছে মঙ্গলবার। সেই দেহটি সমরেরই কিনা, তা এখনও জানা যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষা করানো হতে পারে। বাসন্তীর সমরের মতোই সোনারপুরের অচিন্ত্য মিস্ত্রি ও দীপঙ্কর মণ্ডলের কোনও খবর নেই। তাঁদের নাম এখনও রয়েছে নিখোঁজের তালিকায়। তাঁরা বেঁচে আছেন নাকি নেই, প্রশাসন বলতে পারেনি কিছুই। ফলে প্রতি ক্ষণে উদ্বেগ বাড়ছে এই দুই পরিবারের। তাঁরা এই প্রথম দক্ষিণের রাজ্যে যাচ্ছিলেন কাজ করতে। দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি এমন বিপদের কথা।
উল্লেখ্য, অভাব-অনটনের সংসারে দু’টো টাকা বেশি উপার্জনের জন্যই যাওয়া, এখন সেই টাকাই জলের মতো খরচ করে, গাড়ি ভাড়া করে দফায় দফায় বালেশ্বর, কটক, মেদিনীপুরে তাঁদের খুঁজে বেড়াচ্ছে পরিবারগুলি। এখনও পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। কুলতলির শ্যামাপদের পরিবারের পরিস্থিতি করুণতর। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে তাঁদের ফোনে বলা হয়েছিল, ভুবনেশ্বর এইমসে রাখা ৬০ নম্বর দেহটি শ্যামপদর। কিন্তু তাঁর মামা গৌরাঙ্গ হালদার সেখানে গিয় তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভাগ্নের দেহ শনাক্ত করতে পারেননি। এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন। খালি হাতে ফিরে এসেছেন তিনি। ফের রওনা দিয়েছে তাঁর পরিবার। তবে দেহ খুঁজে না পেয়ে তাঁদের আশা, নিশ্চিতভাবেই ওড়িশার কোনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন শ্যামাপদ। গতকালই কটকের হাসপাতাল থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত বাংলার ১০৩ জনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। ৩১ জন এখনও নিখোঁজ। উড়িষ্যা সরকার ও রেলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাঁদের খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।