শুক্রবার উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। যার ফলে গোটা এলাকা কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই তা ৩০০ ছু্ঁইছুঁই। এই পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে দেহ বাড়িতে আনতে গিয়ে অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবার। কারণ মৃতদেহ বা আহতদের বাড়িতে ফেরাতে কোনও ব্যবস্থা করেনি রেল। দ্বিগুণ গাড়িভাড়া দিয়ে দেহ আনতে হচ্ছে। চাঁদা তুলে গ্রামবাসীরা পূর্বস্থলীর অসহায় এক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার কাটোয়ার এক শ্রমিক পরিবার গয়না বন্ধক রেখে মৃতদেহ বাড়িতে এনেছে।
বাড়িতে দেহ ফিরিয়ে আনতে রেল কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করলেও সহযোগিতা মেলেনি। বাধ্য হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে গ্রামের বাড়িতে আনতে হয়েছে মৃতদেহ। রবিবার পূর্বস্থলীর নিমদহে বাপি পণ্ডিতের (৩৩) দেহ আনার পরেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অ্যাম্বুল্যান্সের সেই টাকা মেটাতে নিজেরাই অর্থ তুলে দরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় মানুষজন। সহায়তা করেছেন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ও।
মৃতের কাকা সমীর পণ্ডিত ও ভাই রাজু পণ্ডিত বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওই রাতেই আমরা উড়িষ্যা রওনা দিই। বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও বাপিকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। পরে মর্গে গিয়ে প্রচুর লাশ হাতড়ে ওর মৃতদেহ উদ্ধার করি।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘মৃতদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে যাই। অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করলে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ২০ হাজার টাকা করে চায়। শেষপর্যন্ত হাতে-পায়ে ধরে একটি অ্যাম্বুল্যান্সকে ১৭ হাজার ৫০০ টাকায় রাজি করাই। রবিবার ভোরে বাড়িতে ফিরে সেই টাকা কীভাবে শোধ করব তাও বুঝতে পারছিলাম না। পরে গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে সেই টাকা পরিশোধ করে দেন। বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় এদিন পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
অন্যদিকে, শনিবার কুড়ি হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া আগাম মিটিয়ে তবেই কাটোয়ার কৈথন গ্রামের সাদ্দাম শেখের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে আসা হয়। মৃতের দাদা ফিরোজ শেখ বলেন, ‘সোনার গয়না বন্ধক রেখে কোনও রকমে ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে ভাইয়ের দেহ আনতে গিয়েছিলাম। ২০ হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া আগাম না মেটানো পর্যন্ত গাড়ি ছাড়েনি। হাতে-পায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করেছি যাতে ভাড়া কিছুটা কম করে। কিন্তু এক টাকাও কম করেনি।’ তিনি জানান, ‘বালেশ্বর হাসপাতাল থেকে চার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করতে হয়েছিল। যতটা রাস্তা এসেছি তাতে খুব বেশি হলে ১০-১১ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া উচিত। আমাদের কাছ থেকে এই পরিস্থিতির মধ্যে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হয়েছে।’