করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এখনও শিহরিত করছে দেশবাসীকে। ক্রমশ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এহেন মর্মান্তিক পরিণামের নেপথ্যে রেলের গাফিলতি এবং অকর্মণ্যতাই যে দায়ী, তা কার্যত স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়ানো শুরু করেছে বিরোধীরা। এর মধ্যেই আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এল। জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন রুটে যে সঠিকভাবে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হচ্ছে না, সেটা ২০১৯ সালেই জানিয়েছিল রেল সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি। ৩ বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, দক্ষিণপূর্ব রেলে বিপুল শূন্যপদের জন্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৯ সালে সংসদ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, “এই কমিটির অনুসন্ধান অনুযায়ী কর্মীর অভাবে এই রুটে রেলের ব্রিজ এবং ট্র্যাকগুলির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মীর পদ এখনও শূন্য। এই কর্মীর অভাবে রেলে যাত্রী নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ থেকে যাচ্ছে। মন্ত্রকের এই ঔদাসীন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।” ২০১৯ সালে রেল সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি এই রিপোর্ট দিলেও কেন্দ্র সেটাকে একেবারেই আমল দেয়নি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে নতুন করে কর্মী নিয়োগ হয়নি। বরং আরও বেড়ে গিয়েছে শূন্যপদ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ৯৬ হাজার ৫৮২টি নন গেজেটেড পদের মধ্যে এখনও ১৭ হাজার ৮১১টি পদ ফাঁকা। ৯৩৭টি গেজেটেড পোস্টের মধ্যে ১৫০টি ফাঁকা। হিসাব বলছে দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ রেলে প্রচুর লোকো পাইলট পদে কর্মী নেই। এই দুই রেল মিলিয়েই সাতশোর বেশি লোকো পাইলট নিয়োগ করা দরকার। অথচ সরকার সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না কবচও। প্রায় ৬ মাস আগে এই প্রযুক্তি ছাড়পত্র পাওয়া সত্ত্বেও দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ রুটে এখনও কবচ নেই। ২০১৯ সালে সংসদীয় কমিটির সেই সতর্কবার্তা কেন্দ্র মেনে নিলে আদৌ বালেশ্বরের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা যে অনেকটা কমে যেত, তা বলাই বাহুল্য। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ছোটবড় মোট ৬৩৮টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে পাটনায় রেল দুর্ঘটনায় দেড়শোর বেশি মানুষ মারা যান। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষধামে দুর্ঘটনা, ২০১৭ সালে পুরী-হরিদ্বার উৎকল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা এখনও দগদগে দেশবাসীর স্মৃতিতে।