আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য না থাকার ফলে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা চেপেছে বাইডেন সরকারের ঘাড়ে। আর তাই বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে থাকলেও দেউলিয়া হতে বসেছে আমেরিকা! তাদের অর্থের ভান্ডার ঠেকেছে তলানিতে। মূলত, কোভিড অতিমারি এবং তার পরবর্তী সময়ে দেশ সচল রাখতে আমেরিকার যে নীতি, তা-ই দেশটিকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। বিভিন্ন দেশ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আমেরিকার ঋণ রয়েছে। গত কয়েক বছরে সেই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে হু হু করে।
সরকারি নীতি অনুযায়ী আমেরিকার জন্য ঋণ গ্রহণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া আছে। অর্থাৎ, হোয়াইট হাউস চাইলেই ইচ্ছামতো ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলতে পারে না। চলতি বছরের গোড়াতেই সেই ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে বাইডেন সরকার। বর্তমানে দেশে-বিদেশে আমেরিকার সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ ৩১.৪ লক্ষ কোটি ডলার। এ দিকে, সরকারের হাতে টাকাও নেই। প্রশাসন এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে তাই আরও ঋণের প্রয়োজন।
আগামী বছর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই রাজনৈতিক কারণে এই মুহূর্তে করবৃদ্ধি সম্ভব নয়। সরকারের ব্যয়ও কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি করার জন্য ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেন বিরোধী রিপাবলিকানদের সহায়তা চেয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা একজোট হয়ে ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। আপাতত হাউসে ৩১৪-১১৭ ভোটের ব্যবধানে গৃহীত হয়েছে বাইডেনের প্রস্তাব। এ বার এই বিল যাবে উচ্চকক্ষ সেনেটে।
প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঋণ গ্রহণের সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও হোয়াইট হাউসের তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। যত খুশি ঋণ নিতে পারে তারা। এক্ষেত্রে তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির পরিচালক মুদ্রা ছাপে তারাই। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির সময় গোটা বিশ্বের বহু মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন, তখন ওই এক বছরে রাতারাতি ৩ লক্ষ কোটি ডলার ছেপে দেশের নাগরিকদের মধ্যে তা বিলিয়ে দিয়েছিল তারা। এর ফলে, আমেরিকায় কারও তেমন টাকার অভাব হয়নি অতিমারিতেও।
কিন্তু মার্কিন সরকারের এই নীতির ফলে মানুষ বেশি টাকার অধিকারী হন ঠিকই, কিন্তু বাজারে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পরিমাণ তাতে কমে আসে। চাহিদা বেড়ে যায়, জোগান তার সঙ্গে মেলে না। ফলে মানুষের কাছে টাকা থাকলেও দোকানে পর্যাপ্ত জিনিস থাকে না। ভারতেও একাধিক ক্ষেত্রে আমেরিকার ‘ভুল’ নীতির প্রতিফলন দেখা যার। রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে জেতার আশায় সাধারণ মানুষকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা এবং ঢালাও সুযোগ-সুবিধার লোভ দেখায়। কিন্তু ক্ষমতায় এলে সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করার মতো টাকার জোগান দিতে পারে না।