উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে বিতর্ক যেন পিছুই ছাড়ছে না বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের। ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাম্প্রতিক কালে বারবারই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে রবি ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এবার আরও বড় এবং চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল বিশ্বভারতীতে। সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনেছেন এক গবেষক। এমনকী তাঁর এও দাবি যে, এই নির্যাতনের ঘটনা একেবারেই নতুন নয়, বরং অনেকদিন পুরনো।
গবেষকের দাবি, অভিযুক্ত অধ্যাপক দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে প্রতারণা, শোষণ, মানসিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি করেছেন। এতদিন সম্মানহানির ভয়ে মুখ খোলেননি তিনি। তবে সম্প্রতি সেই শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছয়। এতেই ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, এই বিষয়টি তিনি প্রথমে কর্তৃপক্ষের নজরেই এনেছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বরং উল্টে তাঁকে আরও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে ওই অধ্যাপকের জন্য। এরপরই পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই গবেষক। গত বুধবার শান্তিনিকেতন থানায় গিয়ে তিনি অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে জানা যায়নি অভিযুক্ত অধ্যাপকের নাম।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, ওই গবেষক ২০১৫ সালে গবেষণার জন্য বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানকার এক অধ্যাপক গবেষণার কাজে মহিলার গাইড হিসাবে নিযুক্ত হন। অভিযোগ, সেই অধ্যাপকই তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ওই গবেষককে তাঁর গবেষণার কাজে নিয়মিত চাপ দিয়ে ভিনরাজ্যে নিয়ে যেতে থাকেন। এমনকী গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় ফোন করা থেকে শুরু করে ভিডিও কলে উত্যক্ত করা— বাদ ছিল না কিছুই। এখানেই শেষ নয়। ওই গবেষক যাতে অন্যত্র কোথাও বিয়ে না করেন, সে জন্য নিয়মিত চাপ দিতেন। যাতায়াতের পথে তাঁর অমতেই ট্রেন, বাস ও বিভিন্ন জায়গায় পিছু নিতেন ওই অধ্যাপক।
এর মধ্যেই একদিন অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগকারিণীকে নিজের গাড়িতে জোর করে তুলে ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানি করেন। এদিকে তখনই তাঁর অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে, তিনি ঘাবড়ে যান এবং পরিবারের সম্মানহানির ভয়ে তিনি একেবারেই চেপে যান। এদিকে তখনও তাঁর গবেষণার কাজ শেষ হয়নি। আর বিয়ে হতেই তাঁর ওপর ওই অধ্যাপক নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়াতে থাকে বলে অভিযোগ। গবেষণার কাজে চরম অসহযোগিতাও শুরু হয়। এরপরেই ২০২২ সালের শুরুতে তিনি গোটা বিষয়টি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে জানান।
এরপর ওই অভিযুক্ত আরও রেগে গিয়ে সেই মহিলাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগ্রহ করেন। এর পরই শুরু হয় তদন্ত। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির নির্দেশে বেশ কয়েকবার উপস্থিত হয়ে নিজের বয়ান ও তথ্য প্রমাণ জমা দেন ওই গবেষক। কিন্তু মাঝে এক বছর পার হয়ে গেলেও কোনও বিচার হয়নি। এমনকী ওই মহিলার এও অভিযোগ যে, বিষয়টি জানার পর গ্রাহ্য করেননি উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে, বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি ওই গবেষক। বিষয়টিকে বিচারাধীন বলে মন্তব্য করে তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন।