রাজধানীতে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের সমর্থনে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সরব হলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ধর্মতলার গোষ্ঠ পাল মূর্তির নিচে আয়োজিত এক সভায় তিনি অভিযোগ করলেন, ক্রিকেট-সহ দেশের সমস্ত খেলার কমিটির মাথায় বসে রয়েছেন বিজেপি নেতারা। বহু ক্ষেত্রে রাজনীতি করে তারা প্রতিভা সম্পন্ন খেলোয়াড়দের জায়গা দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন। বাংলার দুই কুস্তিগিরকে এদিন চাকরি দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে সব খেলার মাথায় বিজেপি নেতারা বসে আছেন। আগে নিয়ম ছিল যে রাজনৈতিক নেতারা কখনও কোনও ক্রীড়া সংস্থার চেয়ারম্যান বা প্রধান হবেন না। আমি ক্রীড়ামন্ত্রী থাকার সময় রুল জারি করেছিলাম।’’ প্রসঙ্গত, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব পদে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ ও প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। আর কুস্তি সংস্থার প্রধান পদে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। তাঁর বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ চলছে দিল্লীতে। সেই ঘটনার জেরে বুধবার হাজরা মোড় থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা বলেন, ‘‘আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাব না। তাঁরা অত্যাচার সহ্য করে লড়াই করছেন। গতকাল শুনেছিলাম ওই বীরপুঙ্গব নেতা নাকি পদত্যাগ করেছে। কিন্তু আজ আবার শুনলাম তিনি পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগ করে আসলে লাভ নেই। কারণ বিজেপি খেলোয়াড়দের কমিটির মাথায় তাদের কোনও না কোনও নেতাকে বসিয়ে দিচ্ছে। ফলে যোগ্য খেলোয়াড়রা সুযোগ পাচ্ছে না। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন, সেই কুস্তিগিরদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অনেক কষ্ট করে লড়াই করতে গিয়ে দেশের জন্য তাঁরা ঘাম ঝরিয়েছেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন তাঁরা। অনেক সময় তাঁরা খেতেও পারেননি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পকসো আইনে তো সবার আগে গ্রেফতার করা উচিত ছিল অভিযুক্তকে। সুপ্রিম কোর্ট বলল, তা সত্ত্বেও অ্যারেস্ট হলো না। মাঝে মাঝে নাটক করে ভয় দেখানো হচ্ছে, চমকানো হচ্ছে। আমি দেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জাবোধ করছি। বিশ্ব কুস্তি সংস্থা তো বলেই দিয়েছে এমনটা চলতে থাকলে ভারতকে তারা বাদ দিয়ে দেবে। কাদের জন্য এ সব হচ্ছে? আমি বলব দেশজুড়ে যত খেলোয়াড় আছেন, সবাই একসঙ্গে প্রতিবাদে নামুন। আজ আপনারা প্রতিবাদ না করলে সকলের জীবন তছনছ করে দেবে এরা।’’
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘সব প্রতিবাদীদের ভয় দেখিয়ে রাখা হচ্ছে। কাউকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় খুন করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে চমকে ধমকে রাখা হচ্ছে। খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের পদকের মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। দেশের জন্য যাঁরা পদক নিয়ে আসেন, তাঁদের জন্য আমরা গর্ব অনুভব করি। আমি তাঁদের বলব লড়াই ছাড়বেন না। কারণ এটা জীবনের লড়াই, সত্যের লড়াই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যতক্ষণ না গ্রেফতার হবে ততক্ষণ কিন্তু আইন ছেড়ে কথা বলবে না। বলা হচ্ছে ওয়ান পার্টি, ওয়ান নেশন। ওয়ান লিডার, ওয়ান নেশন। ওয়ান ল, ওয়ান নেশন। যদি এক দেশে একই আইন থাকে তাহলে শাসক দলের নেতাদের কেন ছাড়া হচ্ছে?’’ ঘটনার তদন্ত নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন মমতা। বলেন, ‘‘সিট তদন্ত করে বলছে কিছুই পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের ১০ বছর পর কোন জায়গায় অনুসন্ধান করতে গেলে কিছু পাওয়া যায় কি? বিজেপি আপনাদের প্রমাণ। তাই আপনারা কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। গ্রেফতার করতে হবে, দোষীকে শাস্তি দিতে হবে।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমি আবার তাঁদের সমর্থনে প্রতিনিধিদল পাঠাব। কাউকে না কাউকে প্রতিবাদে সামিল হতে হয়। বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতে হয়।’’ এ দিন মঞ্চে উপস্থিত দুই কুস্তিগিরকে রাজ্য সরকারের চাকরি দেওয়া হয়। পরে গোষ্ঠ পালের মূর্তি থেকে মোমবাতি মিছিল করে ধর্মতলার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে যান মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘সবাইকে সিবিআই দিয়ে গ্রেফতার করাবেন? সবাইকে ইডির কাছে ধরিয়ে দেবেন? দেখতে চাই আপনাদের কাছে কত জেল আছে, কত আদালত আছে। এই লড়াই আমাদের স্বাধীনতার লড়াই’’, বিজেপিকে একহত নিয়ে জানান মমতা।