কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে মণিপুরে কিছুতেই নিভছে না হিংসার আগুন। আবারও নতুন করে অশান্তি দানা বেঁধেছে এই ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার শাসিত রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে শান্তি ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেনাধ্যক্ষ অনিল চৌহান বলেছেন, শান্তি ফিরতে সময় লাগবে। তাঁর মতো অনেকেই মনে করছেন, মণিপুর শান্ত হতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৪০ জনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করলেও সেনাবাহিনী তা মানতে নারাজ।
মঙ্গলবার দুপুরেই পুণেতে এক অনুষ্ঠানে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেন সেনাধ্যক্ষ চৌহান। সেখানে তিনি বলেন, মণিপুরে যা ঘটেছে তা মোটেই রাষ্ট্র বিরোধী গণঅভ্যত্থান নয়। ওখানে দুটি জাতি গোষ্ঠীর পুরনো সংঘাত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এটি নিছকই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। সেনা চেষ্টা চালাচ্ছে অবস্থা সামাল দিতে তবে সময় লাগবে।
এদিকে, মণিপুরে শাহের সঙ্গে সেনা ও সিভিল প্রশাসনের বৈঠকে বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্রের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, শাহের সঙ্গে বৈঠকে যেখানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, গোয়েন্দা প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিবের মতো অফিসারেরা রয়েছেন সেখানে বিজেপি নেতা কী করছেন? এটা কি সরকার ও শাসক দলের যৌথ শাসন।
প্রসঙ্গত, পাত্র বিগত কয়েকদিন ধরেই মণিপুরে রয়েছেন। তিনি বিজেপির জাতীয় নেতত্বের তরফে মণিপুরের দায়িত্বে রয়েছেন। গত ৩ মে জাতিদাঙ্গা শুরুর আগে থেকে তিনি মণিপুর নিয়ে ব্যস্ত সেখানে বিজেপি বিধায়কদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায়। এদিকে, বীরেন সিংহ ও সেনাধ্যক্ষের বক্তব্যের বয়ানের ফারাক নিয়ে মণিপুর পরিস্থিতি নয়া জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
তিনদিন আগে সেখানে সেনা ও আধাসেনার যৌথ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে ৪০জন হামলাকারী নিহত হয়। তাদের বেশিরভাগই কুকি জনজাতিভুক্ত মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো রিপোর্টে নিহতদের দেশবিরোধী জঙ্গি বলে উল্লেখ করেন। ইম্ফলের সাংবাদিক বৈঠকেও একই কথা বলেন তিনি।
কিন্তু মণিপুরের গোলমালের প্রকৃত কারণ দেশ বিরোধী অভ্যত্থান বলে মানতে চাননি সেনাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, এটা দুই জনগোষ্ঠীর গোলমাল। আসলে গত ৩ মে বড় আকারে গোলমালের বড় থেকে প্রায় ১৪ হাজার সেনা জওয়ান ওই পাহাড়ি রাজ্যে দায়িত্বে আছে। স্বয়ং সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে সেখানে তিনদিনের জন্য ছিলেন।
ফলে নিচুতলার পরিস্থিতি এবং গোলমালের কারণ সম্পর্কে সেনাকে অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সেনাধ্যক্ষ পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করেছেন। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রী আগ বাড়িয়ে কুকিদের গায়ে জঙ্গি তকমা জুড়ে দিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।