অভিনব পদক্ষেপ নিতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে জয় বাংলার মতো সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারির জন্য অভিন্ন পোর্টাল আনছে রাজ্য। এর নাম দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল রেজিস্ট্রি সিস্টেম। এই পোর্টাল চালুর লক্ষ্য হল, এক ব্যক্তি রাজ্য সরকারের একই ধরনের একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা যাতে না পান। পাশাপাশি এই ধরনের প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না, এমন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করা। এর জন্য রাজ্য সরকার আধার কার্ড নম্বরকে হাতিয়ার করতে চাইছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই এই নয়া পোর্টাল আত্মপ্রকাশ করবে। যা নিয়ন্ত্রণ করবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। নবান্নের আধিয়াক্রিকদের দাবি, রাজ্যের সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাভোগীর নামের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের কাজ প্রায় শেষ। এখন এই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি বিভিন্ন দফতরের অধীনে রয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, প্রতিবন্ধী পেনশন, প্রতিবন্দী পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রকল্পগুলি নারী ও শিশুকল্যাণ দফতের অধীনে চালু রয়েছে। আবার অনগ্রসর কল্যাণ দফতর শিক্ষাশ্রী ও মেধাশ্রী বৃত্তি দেয়। সংখ্যালঘু দফতরের আবার ঐক্যশ্রী বৃত্তি রয়েছে। সংখ্যালঘুদের সিংহভাগই এখন অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণীর মধ্যে পরে। তাদের পোর্টালেই এই প্রকল্পগুলির তথ্য মেলে। ফলে অনেক সময়েই নজরে আসছে, এক ব্যক্তি সংখ্যালঘু বৃত্তি পাচ্ছে, আবার একই সঙ্গে অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণীর বৃত্তিও পাচ্ছে। দুই বৃত্তি এক ব্যক্তির পাওয়ার কথা নয়।
অন্যদিকে কেউ বিধবা ভাতা নিচ্ছেন, একই সঙ্গে বয়স্ক ভাতা পেনশন নিচ্ছেন। এই ত্রুটি দূর করতে রাজ্য সরকার সমস্ত দফতরের অধীনে থাকা সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিকে এক ছাতার তলায় আনতে এই পোর্টাল খুলছে রাজ্য। এর তথ্যকে ভিত্তি করেই রাজ্যের অর্থ দফতর এবার থেকে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরসারি টাকা পাঠিয়ে দেবে। তাই এর পর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও ভূমিকা থাকবে না। খাদ্যসাথীর তথ্যকে ভিত্তি করেই এই নয়া পোর্টালের তথ্য ভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নবান্নের কর্তাদের যুক্তি, রাজ্যে প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষের ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। ৯৭ শতাংশ রেশন কার্ডের সঙ্গে আবার আধার সংযোগ রয়েছে। ফলে এই নয়া পোর্টালের পক্ষেও সহজ হবে এক ব্যক্তি কতগুলি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে, তা জানার। পেলে তার সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের দুটি সুবিধার বদলে একটি স্থির করে বাকিগুলি বাতিল করা সহজ হবে। আবার প্রকৃত গরিব মানুষের যাদের রেশন কার্ড রয়েছে, অথচ কোনও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সুযোগ পান না, এমন নাগরিক চিহ্নিত করে সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।