এবার কুড়মিদের সমস্যাগুলি দূর করতে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, দলীয় তরফে রাজ্যের মুখপাত্র, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তৃণমূল কংগ্রেসের কুড়মি জনজাতির প্রথম সারির পুরুলিয়ার নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত হয় এই বৈঠক। তবে এই বৈঠকের প্রথম দিকে ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া। গত ১৭ই মে কলকাতায় জঙ্গলমহলে শাসকদলের কুড়মি জনজাতির নেতৃত্বদেরকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠক থেকেই নির্দেশ ছিল, এই জনজাতির উন্নয়নকল্পে রাজ্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা ব্যাপকভাবে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সেই কাজ জঙ্গলমহলের এই জেলায় কুড়মি জনজাতির নেতৃত্বরা করতে পারেননি। এর পিছনে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ। নবজোয়ার কর্মসূচিতে এই জেলায় পা রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার হতেই কুড়মি সমস্যা নিয়ে দ্রুত প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তর দাবির বিষয়ে রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে চারবার সুপারিশ করেছে। কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে, কেন তাঁদেরকে আদিবাসী করা হবে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে বারে বারে রিপোর্ট চেয়েছে। রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া এই বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। এই সমগ্র বিষয়টিকেই জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় কুড়মি মানুষজনের কাছে তুলে ধরতে হবে বলে এদিনের বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল। সেই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মিদের উন্নয়নে যে ‘কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ’ গড়েছে তা ব্যাপকভাবে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। যদিও এই কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের মেয়াদ কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা পুনর্নবীকরণ হবে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছে, এই পরিস্থিতিতে কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে প্রশাসনিক দিক থেকেও দক্ষ এরকম কোনও কুড়মি জনজাতির ব্যক্তিত্বকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। যাকে মুখ করেই কার্যত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা সহজেই যাতে মোকাবিলা করা যায়। সেই সঙ্গে কুড়মিদেরকে সামনে রেখে বিজেপি যে উস্কানি দিচ্ছে, তলে তলে মদত দিচ্ছে এই বিষয়টিও জনসমক্ষে শাসক দল তৃণমূল মানুষজনের কাছে নিয়ে আসবে বলেও ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়। গত রবিবার এই বিষয়ে ঝাড়গ্রাম নেতৃত্বও বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে দিলীপ ঘোষ কুড়মি জনজাতি নিয়ে যে কুকথা বলেছেন তাকে, রীতিমতো রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে প্রচারে নামারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিনের বৈঠক থেকে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো একেবারে স্পষ্ট করে দেন, “যেভাবেই হোক যে অপপ্রচার শুরু হয়েছে তা বন্ধ করে সঠিক বিষয়টি এই জেলার কুড়মি জনজাতির মানুষজনদের কাছে তুলে ধরতেই হবে।” এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শাসক দলের পাঁচ পদক্ষেপ :
১) আদিবাসী তালিকাভুক্তের বিষয়ে চার-চার বার কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ রাজ্যের। এই বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারে নিয়ে আসা।
২) ‘ কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ’- জনজাতির উন্নয়নে এই বোর্ডের প্রচার করা।
৩) কুড়মি জনজাতির বিদগ্ধ মানুষ জনের নামে রাস্তা, কলেজ। এই বিষয়টিকে তুলে ধরা।
৪) দিলীপ ঘোষের কুকথার প্রতিবাদে ব্যাপকভাবে আন্দোলন সংগঠিত করা।
৫) বিজেপির উসকানি ও মদতের রাজনীতি একেবারে বুথ স্তর থেকে তুলে ধরে প্রচার চালানো।