ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে চায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। বর্তমানে দিল্লীর তিহার জেলে বন্দি ইয়াসিন। গত বছর দিল্লীর একটি আদালত জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের এই নেতাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছে। তাঁর ফাঁসির সাজা চেয়ে দিল্লী হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এনআইএ। এদিকে, এনআইএ-এর এই আর্জির বিরোধিতা করে মুখ খুলেছে জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক দল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, এ দেশে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর (রাজীব গান্ধী) হত্যাকারী তথা মৃত্যদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা ছাড়া পেতে পারলে ইয়াসিন মালিককে কেন জেলে আটকে রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত বছর রাজীবের হত্যাকারী হিসাবে সাজাপ্রাপ্ত সব আসামিই বর্তমানে জেলের বাইরে। তাদের পুরোপুরি মুক্তি দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। ইয়াসিনের মুক্তির দাবি তুলেছেন আর এক কাশ্মীরি নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সাজ্জাদ লোন। মুখ খুলেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স-সহ বেশ কয়েকটি ছোট দলও। মনে করা হচ্ছে কাশ্মীরে বিধানসভা ভোটের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় মালিকের ব্যাপারে সেখানকার দলগুলি সরব হয়েছে। একটা সময় উপত্যকার রাজনীতিতে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন ইয়াসিন।
প্রসঙ্গত, ইয়াসিনের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থীদের আর্থিক সহায়তা এবং অন্য অনেকভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগের সাতটি এফআইআর হয়েছিল। তার দুটিতে ইয়াসিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। বাকি পাঁচটির প্রতিটির জন্য দশ বছর করে সাজা হয়েছে তাঁর। তবে সবগুলি সাজা একত্রে চলবে। নিম্ন আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট এনআইএ দিল্লী হাই কোর্টে গিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আর্জি জানালে বিচারপতিরা জেলবন্দি মালিককে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন সোমবার। তাৎপর্যপূর্ণ হল নিম্ন আদালতে শুনানি চলাকালে মালিক তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি অস্বীকার করেননি। বিচারক সাজা ঘোষণার আগে তাঁকে মকুবের আর্জি জানানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। আদালত নিযুক্ত আইনজীবী জেলে গিয়ে ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমা ভিক্ষা করেননি। তাঁর কী সাজা হতে পারে তা বুঝিয়ে বলেন সেই আইনজীবী। তবু অবস্থান থেকে সরেননি কাশ্মীরি নেতা। রায় ঘোষণার আগেও বিচারক তাঁর কথা শুনতে চান। তিনি বলেন, সাজার পরিমাণ নিয়ে কিছু বলার নেই তাঁর।
উল্লেখ্য, একই মামলায় আরও বেশ কয়েকজন অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে আদালতের চোখে। তাদের অন্যতম হল, পাকিস্তানের দুটি উগ্রপন্থী সংগঠনের দুই মাথা হাফিজ সইদ এবং সৈয়দ সালাউদ্দিন। এই দুজনকেই পলাতক দেখানো হয়েছে। ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে এনআইএ-র অভিযোগ, তিনি ভারত বিরোধী পাক সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এছাড়া ২০১৬-’১৭ সালে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনে মদত দিয়েছেন। তাঁর বাড়ি থেকে প্রচুর নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে অভিযোগের সপক্ষে। ইয়াসিনের বক্তব্য ছিল, তিনি ১৯৯৪ সালের পর থেকে হিংসার রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের পথকে বেছে নিয়েছেন। আদালতে আরও বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকলে কি এই অনুমতি দেওয়া হত? প্রশ্ন করেন তিনি।