একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপির আন্দোলন চলছে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বারবারই সামনে চলে আসছে রাজ্য নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য, অন্তর্কলহ। এবার যেমন ফের প্রকাশ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও বিরোধী দলনেতার মধ্যে মতানৈক্য। কাঁটাতার পেরিয়ে আসা সকলকেই কাঁটাতারের ওপারে ফিরে যেতে হবে। হিন্দু বা মুসলমান সকলকেই। শনিবার মালদহের জনসভায় এমনটা বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তবে বিরোধী দলনেতার সেই মতকে দল অনুমোদন করছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
প্রসঙ্গত, বিজেপি কাঁটাতার পেরিয়ে আসা মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ মনে করলেও ওপার থেকে আসা হিন্দুদের ‘শরণার্থী’ মনে করে। তাই শুভেন্দুর মন্তব্যের পর শোরগোল শুরু হতেই সংবাদ মাধ্যমকে সুকান্ত বলেন, ‘আমরা কাউকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে চাই না। দলের অবস্থান তা নয়।’ তবে একই সঙ্গে সুকান্ত বলেছেন, শুভেন্দু এ বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে থাকতে পারেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলে বাকিটা জানবেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার মালদহের মথুরাপুরে বিজেপির জনসভায় শুভেন্দুকে শ্রোতাদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘যে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে ঢুকেছো, তাকে কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে যেতে হবে। সে হিন্দু হোক আর মুসলিম। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে এলে তার সঙ্গে কোনও ব্যাপার নেই।’ বিরোধী দলনেতার এই মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। চাপের মুখে তাই তড়িঘড়ি শুভেন্দুর দাবিকে নস্যাৎ করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত জানালেন।
রবিবার সংবাদ মাধ্যমকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘আমরা কাউকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে চাই না। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে সিএএ-এর মাধ্যমে বাকিদের নাগরিকত্ব দিতে চাই। এটাই আমাদের দলের অবস্থান। বিরোধী দলনেতা ঠিক কী বলেছেন আমি জানি না। আপনি যা বলছেন সেটা ঠিক হলে মনে হয়, তিনি ব্যক্তিগত মত দিয়ে থাকতে পারেন। আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলে জানব, তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে কথাটা বলেছেন। তবে, রাজ্যবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই।’
উল্লেখ্য, বাংলায় সিএএ কার্যকর করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে চলেছে রাজ্য বিজেপি। তবে মোদী সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এই আইন সংসদে পাস করালেও তার ধারা তৈরি করতে পারেনি এখনও। উপরন্তু গত জানুয়ারি মাসে সিএএ-র ধারা তৈরির জন্য আরও ছ’মাসের সময় চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এই পরিস্থিতিতে যখন লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নতুন করে সিএএ প্রসঙ্গ তুলতে চাইছে না, তখনই শুভেন্দু জনসভায় টেনে আনলেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ।