গত বুধবারই সাংবাদিক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রাক্কালে শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেল ‘সেঙ্গোল’ অর্থাৎ সোনার পাতে মোড়া রাজদণ্ডটি প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ‘সেঙ্গোল’ বিনিময় ছিল ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক। অথচ সেই রাজদণ্ডটি এলাহাবাদের মিউজিয়ামে ফেলে রাখা হয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায় কংগ্রেস দেশের ঐতিহ্যের প্রতি কতটা উদাসীন। শুক্রবার বিজেপির সেই বক্তব্যকে ‘বোগাস কাহিনি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে হাত শিবির। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের বক্তব্য, এটা সম্পূর্ণ বানানো গল্প, বোগাস কাহিনি। সেই রাতের সরকারি অনুষ্ঠানে মাউন্টব্যাটনের কাছ থেকে নেহেরুর হাতে সেঙ্গোল হস্তান্তরের কোনও অনুষ্ঠান হয়নি। সরকারি নথিপত্রে সেদিনের অনুষ্ঠানের বর্ণনায় এর কোনও উল্লেখ নেই।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রবীণ অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি ইতিহাসের এই পর্বটি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ নই। তবে ওই বিশেষ দিনটি নিয়ে কোনও লেখায় ক্ষমতা হস্তান্তরের এমন কাহিনি পাইনি। তিনি বলেন, যতদূর জানি তামিলনাড়ুর মঠের সাধুরা ১৪ অগস্ট রাতে জহরলাল নেহরুর হাতে সেঙ্গোল তুলে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পিছনে সাধুদের তাগিদ ছিল। নেহরু তাতে রাজি হয়েছিলেন মাত্র। শাহ তথা বিজেপির দাবি নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজাজি অর্থাৎ চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারির নাতি তথা তাঁর জীবনীকার রাজমোহন গান্ধী। বিজেপির দাবি, ‘সেঙ্গোল’ বিনিয়য়ের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের মূল ভাবনাটি ছিল শেষ গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারির।
নেহরু মতামত চান রাজাজি অর্থাৎ গোপালাচারির। তিনি বেশ কিছুদিন প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ঘেঁটে নেহরুকে জানান, দাক্ষিণাত্যে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করা চোল রাজবংশের নিয়ম ছিল নতুন রাজার হাতে সেঙ্গোল তুলে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর। ব্রিটিশের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরেও সেই পাচীন ভারতীয় রীতি ফেরানো যেতে পারে। নেহরু সেই প্রস্তাবে রাজি হন। সহমত হন বাকি নেতৃবৃন্দও। এরপর সরকারের নির্দেশে তামিলনাড়ুর একটি মঠে থাকা সেঙ্গোলের আদলে নতুন একটি রাজদণ্ড তৈরি করে তৎকালীন মাদ্রাজের নামজাদা অলঙ্কার নির্মাতা সংস্থা ভুম্মিদি বাঙ্গারু ছেট্টি। দুই শিল্পী ভুম্মিদি এথিরাজুলু (৯৬) এবং ভুম্মিদি সুধাকর (৮৮) বর্তমানে চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। তাঁরা সেঙ্গোলটি তৈরির পর বিশেষ বিমানে সেটি দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন।
রাজমোহন গান্ধীর বক্তব্য, ‘রাজাজির নাতি এবং জীবনীকার হিসাবে তাঁর এই বিষয়ে (সেঙ্গোল বিনিময়) ভূমিকার কথা আমার সম্পূর্ণ অজানা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের খবর সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানার পর আমি এই বিষয়টি জানতে পারি। তাঁর বক্তব্য, আমার মতো আরও অনেকের কাছেই যেহেতু এটি নতুন তথ্য তাই সরকারের উচিৎ এই সংক্রান্ত সরকারি নথিপত্র প্রকাশ করা। সেটা সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্যও জরুরি। তিনি আরও বলেন, যে ছোট্ট ভিডিও তথ্যচিত্র সরকার প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে নেহেরু সেঙ্গোল হাতে দাঁড়িয়ে এবং তাঁকে ঘিরে আছেন কয়েকজন সাধু। বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, তামিলনাড়ুর মঠের সাধুরা ১৪ অগস্ট রাত পৌনে এগারটা নাগাদ নেহরুর বাড়িতে গিয়ে সেঙ্গোলটি তুলে দিয়েছিলেন।