অব্যাহত হিংসার আগুন। বিজেপিশাসিত মণিপুরে রবিবার রাত থেকেই নতুন করে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ইম্ফলের চেকন এলাকায়। স্থানীয় বাজারের দখল নিয়ে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে। লুঠপাট চলছে দোকানপাট, ঘর-বাড়িতে। মঙ্গলবার গভীর রাতে সে রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলার ফউবাকচাও এলাকায় একটি জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ ৩টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। তার পাল্টা হিসাবে অন্য আর একটি জনগোষ্ঠীর মানুষ ওই এলাকাতেই আরও ৪টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। এই ঘটনায় এক জন মারা গিয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় কত জন হতাহত হয়েছেন, বুধবার বিকেলের আগে তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। হিংসার ঘটনা রুখতে রাজ্যের স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলোতে নতুন করে কার্ফু জারি করা হয়েছে। মণিপুরে যে আরও ব্যাপক আকারে হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
এপ্রসঙ্গে ইম্ফল থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, “এ ঘটনা পুরোপুরি জাতিগত দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের তরফে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে দরজায় লাল দাগ দিয়ে। বলা হয়েছে, বেআইনি অনুপ্রবেশকারী (মিয়ানমার থেকে আসা) চিহ্নিত করা হচ্ছে। চার্চগুলোকে চিহ্নিত করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৩০৪টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি ‘এথনিক ক্লিনজিং’–এর চেহারা নিয়েছে। এই হিংসা থামাতে মানুষের মনে যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা দরকার, তা করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।” প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন কারণে মণিপুর রাজ্যে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপরই নতুন করে উত্তাপ ছড়ায় ‘ডবল ইঞ্জিন’ ত্রিপুরায়।