ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও হেনস্থার অভিযোগ এনে দিল্লির যন্তরমন্তরে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনেশ ফোগত, সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ারা৷ কারণ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও তাঁদের গ্রেফতারির দাবি এখনও পূরণ হয়নি। তবে তাতেও কাজ হচ্ছে না। বহাল তবিয়তে ঘুরছেন ব্রিজভূষণ শরণ সিং। শেষে তদন্তকারী আধিকারিকদের ওপর বিরক্ত হয়ে কেন্দ্রের দেওয়া বিভিন্ন সম্মান ফেরত দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাক্ষী, ভিনেশ, পুনিয়ারা। কিন্তু এরপরই তদন্তকারী আধিকারিকরা নির্যাতিতাদের কাছে তাঁদের অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে ভিডিও/অডিও ক্লিপ ও ছবি চেয়েছেন। এতে বেজায় চটেছেন কুস্তিগিররা। তাঁদের বক্তব্য, কারও ওপর যখন যৌন নিগ্রহ হয়, তখন কি কেউ তা রেকর্ড করে রাখে?
আরও একটি চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন কুস্তিগীররা। যন্তরমন্তরে আন্দোলনে বসে থাকা এক কুস্তিগির জানান, তদন্তকারীদের একজন বলেছেন, কোনও বাবা যেভাবে তাঁর সন্তানের গায়ে হাত দেন, ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংও সেভাবেই হাত দিয়ে থাকতে পারেন। সবমিলিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ কুস্তিগিররা বলছেন, যেভাবে তদন্ত চলছে, তাতে তাঁদের কোনও ভরসা নেই। এই পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, ভারতীয় মহিলারা যখন ক্রীড়া জগতে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে এত সম্মান এনে দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কি যথাযথ আচরণ করছে ফেডারেশন বা সরকার? গোটা ঘটনা যে দিকে যাচ্ছে তাতে অনেকেই বিরক্ত। প্রশ্ন উঠতে শুরু এরকম একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে যখন অভিযোগ উঠেছে তখন সরকারকে আরও উদার মনোভাব নিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল।
ডব্লিউএফআই সভাপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনার পরও যেভাবে বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, তা আদতে পুরুষতান্ত্রিক এক সমাজের কথাই বলছে। যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র কথা বলছেন! দেশের শীর্ষস্থানীয় মহিলা ক্রীড়াবিদরা যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে হোচট খাচ্ছেন তখন দেশের সাধারণ মহিলাদের কি অবস্থা তা বোধ সহজেই কল্পনা করা যায়। যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায়, যেখানে পুরুষরা ক্ষমতায় রয়েছেন, সেখানে অল্পবয়সী, দুর্বল মহিলাদের অবস্থা কতটা করুণ তা অনুমান করা যায়। তাই সরকারের উচিত ছিল এই বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যা থেকে সকলের কাছে একটি সদর্থক বার্তা পৌঁছে দেওয়া যেত।
পস আইন সমস্ত কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক– যার মধ্যে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান এবং খেলার স্থানগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) থাকে, যেখানে দশ বা তার বেশি লোককে নিয়োগ করা হয়৷ ২০১২-১৩ সালের নির্ভয়া আন্দোলনের সময় নারী, সমাজকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের সময় পস আইনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনে ভারতীয় মহিলাদের ওপর যৌন হিংসার ধারণাটাই বদলে দিয়েছিল। ক্ষমতার ব্যবহার করে কিভাবে মহিলাদের যৌন হয়রানি করা হয় তা সেময়ের আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে এসেছিল। মহিলাদের ‘ভয়মুক্ত স্বাধীনতা’র বিষয়টি ওই সময় জনসাধারণের মনে উত্থাপিত হয়েছিল। পরে যা ভর্মা কমিটির রিপোর্চের ভিত্তিতে আইনে পরিণত হয়েছিল। মহিলা কুস্তিগিরদের বর্তমান এই আন্দোলনও ভারতের মহিলাদের জেগে ওঠার জন্য নতুন একটি সন্ধিক্ষণে পরিণত হচ্ছে।