বিজেপিকে ধরাশায়ী করে কর্ণাটক দখলই শুধু নয়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে কংগ্রেস। তবে এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে দল। ডিকে শিবকুমার না সিদ্দারামাইয়া? এই দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়াই মাথাব্যথার কারণ হয়েছে তাদের। এদিকে বৃহস্পতিবারই নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান। বুধবার সিদ্ধান্ত পাকা করতেই হবে। কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খবর, সিদ্ধান্ত নিতে না পারার পিছনে একাধিক কারণের একটি হল গান্ধী পরিবারের মধ্যে মতভেদ। সোনিয়া গান্ধীর সমর্থন দলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসাবে পরিচিত ডিকে শিবকুমারের দিকে। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধী চান সি সিদ্ধারামাইয়াকে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরাসরি কোনও পক্ষ না নিলেও তিনিও দাদার দিকেই ঝুঁকে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব দফায় দফায় বৈঠক করেছে কর্ণাটক নিয়ে। দুপুরে রাহুল গান্ধী পৌঁছে যান দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাংলোয়। দুজনের প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয়। সন্ধ্যায় রাহুল এবং কর্ণাটকের দুই মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যাশী সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমার আলাদা আলাদ দেখা করেন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। সোনিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা হয় খাড়গেরও। কিন্তু তারপরেও সোনিয়া-রাহুলের মতভেদ দূর হয়নি। আসলে বিধায়কদের সিংহভাগের সমর্থন প্রবীণ সিদ্দারামাইয়ার দিকে। তাছাড়া পরিছন্ন ভাবমূর্তির জননেতা হিসাবেও কর্ণাটকের রাজনীতিতে সুপরিচিত তিনি। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপালের সমর্থনও সিদ্দারামাইয়ার দিকে। সবদিক বিচার করেই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী চান রাহুল।
অন্যদিকে, সোনিয়া চান মুখ্যমন্ত্রী করা হোক সাম্প্রতিক সময়ে বহু লড়াইয়ের নায়ক শিবকুমারকে। তাঁকে গ্রেফতার করে দিল্লির তিহার জেলে পুরেছিল সিবিআই। সোনিয়া সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কর্ণাটকের ফল ঘোষণার দিন সোনিয়ার জেলে গিয়ে দেখা করার দিনটি স্মরণ করেই কেঁদে ফেলেছিলেন শিবকুমার। দুর্নীতির মামলায় তাঁকে বারে বারে বিজেপিতে যোগ দিতে বলা হলেও তিনি দল ছাড়েননি। সোনিয়া তাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করে বাকিদের বার্তা দিতে চান বিপদে দলের পাশে থাকলে দলও প্রতিদান দেবে। এদিকে, প্রকাশ্যে না বললেও খাড়গের ভোটও শিবকুমারের দিকেই।
তবে রাহুলের আপত্তির কারণ, শিবকুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি, আয়কর মিলিয়ে ১৯টি মামলা ঝুলছে। এরমধ্যে ১০টিকে কংগ্রেস দলকেও টেনেছে তদন্তকারীরা। তাঁর মতে, কংগ্রেস কর্ণাটকে বিজেপি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছে। শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে দলের বাইরের যে লোকেদের সমর্থন কংগ্রেস পেয়েছে তা লোকসভা ভোটে মিলবে না। শুধু তাই নয়। শিবকুমার মুখ্যমন্ত্রী হলে বিজেপির আরও সুবিধা হয়ে যাবে। দুর্নীতির মামলায় মুখ্যমন্ত্রীকে ঘন ঘন তলব করে হেনস্থা করবে। হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করবে। সেই অভিঘাত গিয়ে পড়বে দল ও সরকারের ওপর। তাছাড়া, অধিকাংশ বিধায়ক যখন সিদ্দারামাইয়াকে চাইছেন তখন তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হোক, মত প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির।