গালভরা প্রচারে বরাবরই দড় মোদী সরকার। মহাসমারোহে প্রতি মাসে দেশের কোনও না কোনও রাজ্যে চালু করা হচ্ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। আর সেই ট্রেনকে ঘিরে বিজেপির নেতা থেকে মন্ত্রী, কর্মী থেকে সমর্থক, সবার আনন্দ উল্লাস চোখেও পড়ার মতো। সেই সব বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন করতে আবার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদীকেও ধারাবাহিক ভাবে দেখা যাচ্ছে। এবার মধ্যেই সামনে এল বিপরীত চিত্র। মাত্র ৫ মাসেই বন্ধ হয়ে গেল নাগপুর ও বিলাসপুরের মধ্যেকার চালু হওয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। কারণ? নেই পর্যাপ্ত যাত্রী! রেলের তরফে জানানো হয়েছে, মহারাষ্ট্রের বিলাসপুর-নাগপুর রুটে বন্দে ভারত আপাতত চলবে না। বদলে ওই রুটের যাত্রীদের পরিষেবা দেবে ভারতীয় রেলের আর এক দ্রুতগামী ট্রেন তেজস এক্সপ্রেস। কারণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, ওই ট্রেনটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর একদিনও মোট আসনের ৫০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি হয়নি। আসলে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসকে তুলে ধরা হয়েছিল মোদী সরকারের উন্নয়নের অন্যতম মুখ হিসাবে। দেখানো হচ্ছিল, দেশ মোদীর হাত ধরে এতটাই উন্নতির মুখ দেখেছে যে দেশের মানুষ এখন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোনও ট্রেনেই চড়তে পছন্দ করছেন না। কিন্তু বাস্তব চিত্র হল, এই ট্রেনকে ঘিরে উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল কিছু ধনী মানুষ আর মোদীভক্তদের মধ্যে।
উল্লেখ্য, সাধারণ ট্রেনে বয়স্কদের ছাড় তুলে দিয়ে, মহিলা ও শিশুদের ছাড় তুলে দিয়ে, একের পর এক ফার্স্ট প্যাসেঞ্জারকে এক্সপ্রেস ট্রেনে রূপান্তরিত করে এবং চালু এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া দ্বিগুণ করে দিয়ে ভারতীয় রেলকে কার্যত আইসিসিইউ-তে পাঠিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। বর্তমানে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে গাদাগাদি করে যেভাবে মানুষ যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে, তা বড়ই দুঃসহ। অথচ বড়লোকদের জন্য বন্দে ভারত চালু করে দাবি করা হচ্ছিল, ভারতীয় রেলের নতুন যুগ নাকি শুরু হয়ে গিয়েছে! শুধু তাই নয়, রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত, গরিবরথ এই সব ট্রেন তুলে দিয়ে বন্দে ভারত দিয়েই দেশে ট্রেন চালানোর ফন্দি নিয়ে নিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু রেলেরই আধিকারিকদের একাংশের দাবি ছিল এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালুর সময়ে যে, প্রথম প্রথম এই ট্রেনকে ঘিরে আগ্রহ থাকবে আমজনতা থেকে পর্যটকদের মধ্যে। কিন্তু সেটা মাস ছয়েক, মেরেকেটে ১ বছর। তারপর কিন্তু ছবি বদলাতে বাধ্য। কেননা ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে নিরত্যদিন বা বার বার এই ট্রেনে চলে যাতায়াত করবেন না দেশের মানুষ। সেই সামর্থ্য তাঁদের নেই। দেশের ১০ শতাংশ মানুষের ক্ষমতা আছে বন্দে ভারত চড়ার। ৯০ শতাংশের সেই সুবিধা নেই। তাঁদের জন্য প্রয়োজন সাধারন লোকাল ট্রেন বা মেল, এক্সপ্রেস, ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন। আমজনতার সেই ট্রেনের চাহিদা পূরণ না করে মোদি সরকার যেভাবে বড়লোকদের জন্য ট্রেন চালু করছে তা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এখন সেটাই কার্যত সত্যি হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলায় এখন হাওড়া ও নিউ জলপাইগুড়ি রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই ট্রেনেও যাত্রী আহামরি কিছু হচ্ছে না। অর্থাৎ শুধু নাগপুর-বিলাসপুর রুটের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটিই নয়, দেশে চলাচল করা প্রায় সব বন্দে ভারত এক্সপ্রেসই একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে। আর সেটাও ২৪’র ভোটের আগেই। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্বপ্ন এককথায় ‘ফ্লপ শো’ হয়েই রইল।