অতীতে জগদীপ ধনকর রাজ্যপাল থাকাকালীন নবান্ন-রাজভবন সংঘাতের সাক্ষী থেকেছে বাংলা। সিভি আনন্দ বোসের আমলেও পরিস্থিতি সেই দিকেই এগাচ্ছে। আবার সাম্প্রতিক কালে রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে বিরোধ দেখা গিয়েছে বিরোধী শাসিত কেরালা, তামিলনাড়ুতেও। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যপাল প্রশাসনিক বিষয়ে মতামত দিতে পারলেও হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। যা সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যখন তখন অফিসারদের ডেকে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে পারবেন না। সেটা নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কাজ। রাজ্যপাল-উপরাজ্যপালদের সরকারের পরামর্শ মতো চলতে হবে।
এ জন্য দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়-সহ ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই মহারাষ্ট্রের সরকার পতন ও নতুন সরকার গঠনের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে রাজ্যপালের কড়া সমালোচনা করেছে। গত বছর জুনে ওই রাজ্যের অবিজেপি সরকারের পতনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল ভগৎসিং কোশিয়ারি। তিনি সংবিধান ও আইন ভেঙে একনাথ শিণ্ডের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।
গতবারই প্রথম নয়, ২০১৯-এ বিধানসভা ভোটের পর কোনও দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও রাজ্যপাল কোশিয়ারি বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডনবিশকে মুখ্যমন্ত্রী করতে ভোরের আলো ফোটার আগে রাজভবনে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। বস্তুত, সংবিধানে রাজ্যপালদের ভূমিকার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। রাজভবন ও রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার স্পষ্ট করা আছে সেখানে। তারপরও সুপ্রিম কোর্টকে সংবিধান স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে অবিজেপি রাজ্যে রাজ্যপাল, উপরাজ্যপালদের। যাঁরা ‘ধনকর মডেল’ অনুসরণ করে চলছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।
প্রসঙ্গত, জগদীপ ধনকর ছিলেন বিজেপির চোখে জনগণের রাজ্যপাল। ফলে ধনকরকে অনুসরণ করা অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির রাজ্যপালদের মধ্যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক ক্ষেত্রে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিজেপির রাজ্যপালদের ‘ধনকর মডেল’। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অফিসারের নিয়োগ, বদলিতে উপরাজ্যপালের কোনও এক্তিয়ার নেই। তিনি অফিসারদের ডেকে নির্দেশ দিতে পারবেন না। রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন মাত্র।