মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই বাংলার মানুষের জন্য একাধিক জনমুখী প্রকল্পের সূচনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সেগুলি। এদের মধ্যে অন্যতম হল ‘স্বাস্থ্যসাথী’। বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিয়ে এসেছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। এই কার্ডে এতদিন শুধু চিকিৎসা পরিষেবা মিলত। এবার এই কার্ডের মাধ্যমে ক্যানসারের চিকিৎসাও করা যাবে। আর তার জেরে বহু দরিদ্র রোগী ও পরিবার উপকৃত হতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি, এই কার্ডে ক্যানসার চিকিৎসা করার নাম করে ভুয়ো রোগী জালিয়াতি না করতে পারে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ নিল নবান্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দও।
উল্লেখ্য, কেমোথেরাপির মতো মহার্ঘ চিকিৎসার সুবিধে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এই পরিষেবার ফাঁক গলে ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছিল জালিয়াতি। সেই খবর নবান্নে পৌঁছতেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হল। স্বাস্থ্যসাথীতে ওরাল এবং ইঞ্জেক্টেবল কেমোথেরাপিতে চিকিৎসার নাম করে অনেক ভুয়ো রোগী ঢুকে পড়ছে। আর এই জালিয়াতি হচ্ছে স্থানীয় ছোট এবং মাঝারি নার্সিংহোমে। যারা আদাতে ক্যানসার রোগীর চিকিৎসাই করেনি। এই খবর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে যায় নবান্নে। তারপরই এই জালিয়াতি আটকাতে বড় হাসপাতাল ছাড়া স্বাস্থ্যসাথীতে কেমোথেরাপি নিষিদ্ধ করল রাজ্য সরকার। এই মর্মে স্বাস্থ্য দফতর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অঙ্কোলজি বিভাগ আছে এমন সরকারি হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন গ্রাহ্য হবে স্বাস্থ্যসাথীতে। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে একসঙ্গে মেডিকেল অঙ্কোলজি, সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি এবং রেডিয়েশন অঙ্কোলজির ব্যবস্থা থাকলে তবেই তারা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করতে পারবে।
এর পাশাপাশি, কেমোথেরাপি প্রোটোকলের প্রত্যেকটি সাইকেলের প্রেসক্রিপশন এবং অন্যান্য নথি ওই হাসপাতালকে আপলোড করতে হবে স্বাস্থ্যসাথীর পোর্টালে। ওরাল কেমোথেরাপির ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য। অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বড় উদ্যোগ নিল কলকাতা পুরসভা। শহরের বাসিন্দাদের কারও শরীরে থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা, সেই পরীক্ষা এবার শহরের প্রতিটি পুর-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু হচ্ছে। সমীক্ষা বলছে, শহরে এখন মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে খবর, চিকিৎসকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরেই শুরু হবে পরীক্ষা। যাতে তাঁরা এই রোগে আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যায়। এসবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ক্যানসারের চিকিৎসা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।