অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা এবং সিকিম— উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ৮টি রাজ্য একদিকে যেমন বরাবরই সংবেদনশীল, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এই রাজ্যগুলির অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রাজ্যগুলির সঙ্গে জড়িত রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেই উত্তর-পূর্ব সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আগের সরকারের নীতি ছিল ‘লুক ইস্ট পলিসি’। আমার সরকারের নীতি হচ্ছে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’।’ কিন্তু মোদীর এই নীতি আসলে যে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত করে দেওয়া, তা সাম্প্রতিক কালের সিকিম, মণিপুর, মেঘালয়ের ঘটনাই প্রমাণ করে দিয়েছে।
যেমন, সিকিমের রাস্তায় কয়েক মাস ধরে জনগণের বিক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায় সিকিমের মানুষের মনে জমে থাকা অসন্তোষের বারুদে স্ফুলিঙ্গের কাজ করেছে। দেশের শীর্ষ আদালত একটি পর্যবেক্ষণে বলে, সিকিমের নেপালিরা বিদেশি। লেপচা ও ভুটিয়াদের বাদ দিলে সিকিমে নেপালিরা সংখ্যাগুরু। সিকিম ভারতের সঙ্গে মিলে যায় ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিলে। তবে, সিকিমে সম্প্রতি করছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেসব জাতি স্বাধীন সিকিমের বাসিন্দা ছিল একমাত্র তারাই এই ছাড় পাবে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় নেপালিরা।
আবার, সম্প্রতি মণিপুরে সমস্যার শুরু মেইতেই জনগোষ্ঠীকে জনজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে নিয়ে। মেইতেই সে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ তার অন্তর্ভুক্ত। এত দিন কুকি ও নাগারা জনজাতি হিসাবে গণ্য হলেও মেইতেই-রা ছিল তার বাইরে। সাধারণ দৃষ্টিতে তাতে কোনও অসঙ্গতি ছিল না, কারণ আর্থসামাজিক ভাবে তারাই অনেক এগিয়ে, বাকিরা পিছিয়ে। কিন্তু তবু, সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জনজাতি পরিচয়ের হাজারো সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে মেইতেই-রা এ নিয়ে দীর্ঘ কাল ধরে ক্ষুব্ধ। এত দিনে সেই ক্ষোভের ফল ফলল, জনজাতি মর্যাদা দেওয়া হল। স্বভাবতই বাকি জনগোষ্ঠীরা এতে প্রবল রুষ্ট। অর্থাৎ প্রশাসনের কারণেই এত বড় সংঘর্ষ পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে।
মণিপুরের আঁচ পৌঁছেছে পড়শি রাজ্য মেঘালয়েও। গত ৪ মে (বৃহস্পতিবার) মেঘালয়ের রাজধানীতে কুকি ও মেইতেই জনগোষ্ঠীর সদস্যের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ২০২০-২০২২ সালে আসাম-মিজোরাম সীমান্ত, আসাম-মেঘালয় সীমান্ত একাধিকবার রক্তাক্ত হয়েছিল। সেদিনগুলিতে বিবদমান দুই রাজ্যের মুখোমুখি সংঘর্ষ দেখে গোটা দেশ স্তম্ভিত হলেও মোদী-শাহ ছিলেন নীরব! উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যেগুলিতে এখন এনডিএ ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপি তাদের শরিকদের নিয়ে ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (নেডা) গঠন করেছে। যার আহ্বায়ক হচ্ছেন আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। অথচ সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির বদলে এখন রাজ্যে রাজ্যে সংঘর্ষ চলছে।