ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। আর মাত্র দু-দিনে মধ্যেই আছড়ে পড়তে পারে এই ট্রপিক্যাল সাইক্লোন। ‘মোকা’র গতিপথ কোনদিকে হবে সে নিয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে যে মোখার অভিমুখ বাংলাদেশ-মায়ানমারের দিকে হতে পারে। তবে আবার বাংলা-উড়িষ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মোখা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই সতর্কবার্তা দিচ্ছে নবান্ন। আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলাতে দফায় দফায় বৈঠকও হচ্ছে। আজ সোমবার নবান্ন সভাঘরে বৈঠকের সময় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে রাজ্যবাসীকে অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “মোকা আসছে। ভয় নেই। রাজ্য সতর্ক নজর রাখছে।” মমতা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে একটা নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ৯ ও ১০ তারিখ নাগাদ একটু ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। ১১ তারিখ অবধি বৃষ্টি হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে চিন্তা করার কারণ নেই। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সুন্দরবন-দিঘা থেকে লোকজনকে সরানো হবে। ১১ তারিখ নাগাদ ঘূর্ণিঝড় আসবে, তারপর সেটা বাংলাদেশ হয়ে চলে যাবে মায়ানমারে।হঘূর্ণিঝড় যদি বাংলার দিকে আসে তার জন্য আগে থেকেই সব ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ২ মে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আগামী ১৪ মে অবধি সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে নবান্নে। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হলে উদ্ধারকাজের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুত আছে। উদ্ধারকাজের জন্য এনডিআরএফ টিম তৈরি আছে। ২৫ লাখ ত্রিপল, ৭১ লাখ ত্রাণ সামগ্রীর জিনিসপত্র দেওয়া আছে জেলাগুলিতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মালদহের সভা থেকেও বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় তিনি বলেছিলেন, “কালবৈশাখী বড্ড বেশি হচ্ছে এবং বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগের কালবৈশাখীর বজ্রপাতে ১৮ জন মারা গিয়েছেন। আমরা এঁদের সবাইকে দু’লাখ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” মোকার মোকাবিলায় ‘ইনটিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম’ চালু হয়ে গেছে লালবাজারে। এটির দায়িত্বে আছেন ওয়ারলেস শাখার জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার কর্নেল নবেন্দ্র সিং পাল। পুলিশ, কলকাতা পুরসভা, এনডিআরএফ, দমকল, সিইএসসি, কেএমডিএ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা থাকবেন ওই কেন্দ্রে।।এই বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে, আগামী ১২ মে পর্যন্ত। ৯টি বিভাগে ৯টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দল থাকছে। এছাড়াও পিটিএসে ৩টি এবং লালবাজারে থাকছে ২টি দুর্যোগ মোকাবিলা দল। তারা ২৪ ঘণ্টা সমস্ত কাজ করবে। প্রতিটি বিভাগের নোডাল অফিসাররা বিভাগীয় অফিসারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন। ৩টি আলাদা শিফটে কাজ করবে কন্ট্রোল রুম। এছাড়া, কলকাতার মধ্যে অনেক বিপদগ্রস্ত বাড়ি রয়েছে, সেগুলি যে থানার অধীনে, সেখানকার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের লিস্ট পাঠানো হয়েছে। কোনওরকম অসুবিধা হলেই বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এমনকী, দুর্ঘটনা না ঘটলেও তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। বিপদে পড়লে 94326 10450 নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করা যাবে। 2214 1890, 2250 5033, 2250 5044, 2250 5146 – এই নম্বরগুলিতেও ফোন করা যাবে।
