বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই স্বাস্থ্য, শিক্ষার পাশাপাশি শিল্পের দিকেও বাড়তি নজর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই যে তাঁর পাখির চোখ, আগের দু’দফায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। এমনকী মমতা জমানায় স্বাস্থ্যও কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
বাংলায় গত ৩ বছরে ৫১৫টি নয়া বড়, মেজ, ছোট আকারের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যে গড়ে উঠেছে একাধিক সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাধারন হাসপাতাল, সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল, নার্সিং কলেজ, ক্যাথল্যাব। আর এই সব জায়গায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কয়েক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ওই সব হাসপাতালে ও ক্যাথল্যাবে কাজ পেয়েছেন কয়েক হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনোলজিস্ট।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে গত ৩ বছরে ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে মোট ৫১৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, চালুও হয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের চিকিৎসায় অপরিহার্য ক্যাথল্যাব এখন চলে এসেছে জেলায় জেলায়। গত তিন বছরে ৩০টি নতুন ক্যাথল্যাব এনেছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। বর্তমানে রাজ্যের ৩৩টি হাসপাতালের কাছে এনএবিএইচ-এর মতো সম্মানজনক শংসাপত্র রয়েছে। বাংলার আরও ১৫১টি প্রাইভেট হাসপাতাল এই শংসাপত্রের জন্য আবেদন কৱেছে।
অন্যদিকে, ছোট ও মাঝারি হাসপাতালের সংগঠন পিএনএইচএইচএ-র হিসেব বলছে, গত কয়েক বছরে রাজ্যের বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সংগঠনের দাবি, তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার ৪,৪০০টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। এর ৪০ শতাংশই তৈরি হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ার পরে। রাজ্যের ছোট ও মাঝারি প্রাইভেট হাসপাতালের ৯০ শতাংশ রোগীই স্বাস্থ্যসাথীর আওতাধীন।
পূর্ব ভারতের বড় হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সংগঠনের শীর্ষকর্তা রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের পিছনে স্বাস্থ্যসাথী-সহ বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-এ আমাদের পেশ করা হিসেব অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরে বাংলার বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলেছে। তাতে যে বহু যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সার্বিকভাবে খুব ভাল কাজ হচ্ছে।’
তাঁর দাবি, ‘রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় আস্থা বেড়েছে মানুষের। ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন ক্রমশ কমছে। আগে ঘরে ঘরে শোনা যেত চেন্নাই, মুম্বই, হয়দরাবাদ, পণ্ডিচারী, দিল্লীতে সবাই চিকিৎসা করাতে যাচ্ছে। এখন সেই স্রোতে শুধু ভাটা পড়েছে তাই নয়, সেই সব জায়গার হাসপাতালগুলি বাংলায় সেলস এজেন্ট বসাচ্ছে এখান থেকে রোগীদের সেখানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবার জন্য। তবে ভেলোরে এখনও বাঙালির ভিড় রয়েছে। তার পেছনেও রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী। এখানকার রেফার করা স্বাস্থ্যসাথীর আওতাভুক্ত রোগীর ভেলোরে বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়।’
রাজ্যের বেসরকারি ক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর্তারাও মনে করছেন, স্বাস্থ্যসাথীর অন্যতম সুবিধা হল, তা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। একটি সমান্তরাল অর্থনীতি জন্ম দিয়েছে। ১০ বেডের হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিও মাসে কমপক্ষে ২-৩ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে। এই পিছনে ৯০ শতাংশ অবদানই স্বাস্থ্যসাথীর।