প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিজেপি সাংসদ তথা কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন রিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক জয়ী সাক্ষী মালিক। তিনি বলেছেন, “ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০১২ সালে হাফডজনের বেশি জুনিয়ার ক্রিড়াবিদ ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে লখনউ পুলিশের কাছে গেলেও, ব্রিজভুষণের রাজনৈতিক দাপটের কারণে সবটাই চাপা পড়ে যায়। আমরা আমাদের কেরিয়ারের ভয়ে চুপ ছিলাম। তিনি আরও বলেন, “আমাদের এক ও এক মাত্র লক্ষ্য অপরাধের শাস্তি।” যন্তর মন্তরে কুস্তিগীরদের আন্দোলন দশমদিনে পড়ার পর সাক্ষী মালিক ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে কথিত যৌন কেলেঙ্কারির মামলার প্রসঙ্গে ফিজিওথেরাপিস্ট পরমজিৎ মালিকের বক্তব্য টেনে আনেন। অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন ফিজিও পরমজিৎ মালিক দাবি করেছেন, ব্রিজভূষণ কুস্তিগিরদের যৌননিগ্রহ করতেন। সেটার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন বলে ২০১৪ সালে চাকরি গিয়েছিল বলেও দাবি করেছেন পরমজিৎ।
পরমজিৎ আরও বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছে আমি জানিয়েছিলাম যৌননিগ্রহের কথা। ২০১৪ সালে সেই কথা বলার পর সাই থেকে আমাকে এবং স্ত্রীকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। অলিম্পিয়ান, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে সুবিচার পাচ্ছে না। আমি তো পারবই না। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।” এদিকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রতিবাদী কুস্তিগিররাও এই বিষয়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার মেরি কমের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এবিষয়ে টোকিও অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া বলেন, “আমি মনে করি তারা (পিটি ঊষা এবং মেরি কম) ভুলে গেছেন যে খেলাধুলার কারণেই তারা আজ ক্ষমতায় বসে রয়েছেন। তারা একসময় অ্যাথলিট ছিল, এখন তারা রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন।” গত সপ্তাহে একটি প্রেস মিটে পিটি ঊষা প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। সেই মন্তব্য প্রসঙ্গে মুখ খোলেন সাক্ষী মালিক। “আমি ঊষা ম্যামকে একটা প্রশ্ন করতে চাই, আপনি একজন মহিলা হয়ে আপনি যদি অন্য মহিলাদের যন্ত্রণা বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার অফিসিয়াল পদের কি কোনো মূল্য আছে?” প্রশ্ন সাক্ষীর।
উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দিল্লীর যন্তর মন্তরে বিক্ষোভরত কুস্তিগিরদের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেন, “যখন এই কুস্তিগিররা দেশের হয়ে পদক জেতে, আমরা সবাই টুইট করি এবং গর্ববোধ করি। কিন্তু আজ তারা রাস্তায় নেমেছে ন্যায়বিচারের আশায় এবং তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। মহিলা কুস্তিগীররা এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অনেক সংগ্রাম করে এবং আমি বুঝতে পারছি না সরকার কেন ব্রিজভূষণ শরণ সিংকে বাঁচাতে মরিয়া? কুস্তিগির বজরং পুনিয়া বলেন, “যতক্ষণ না ন্যায়বিচার না হয়, পুলিশ প্রশাসন আমাদের যতই নির্যাতন করুক না কেন আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।” বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক বিজয়ী ভিনেশ ফোগাট, যন্তর-মন্তরে আন্দোলনের অন্যতম মুখ, একটি প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন যে, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লী পুলিশের আশ্বাসের পরে লড়াই শেষ হয়নি। এই লড়াই শুধু এফআইআর দায়ের করা নয়। এই লড়াই ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য, তাকে (সিং) শাস্তি দেওয়ার জন্য, তাকে জেলে পাঠানো এবং ডব্লিউএফআই পদ থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।” জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কুস্তিগিরদের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যন্তর-মন্তরে তাদের আন্দোলনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, আম আদমি পার্টি এবং বাম-সহ বেশ কয়েকটি দলের একাধিক নেতা-নেত্রী।