সেলুলয়েডেও কি হয় এমনটা? শুনতে গল্প হলেও একেবারে সত্যি! ভালোবাসার মানুষের চ্যাট করতে গিয়ে যদি অজান্তেই জঙ্গি সংস্থার গুপ্তচরে পরিণত হন, তবে তার পরিণতি হতে পারে ভয়ানক। ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল ২০০৫ সালে বিশাল কুমার উপাধ্যায়ের সঙ্গে। আই এস আই গুপ্তচর হওয়ার অপরাধে সাত বছর কারাদণ্ড হয় তাঁর। ঝাড়খন্ড থেকে ২০০৪ সালে পুণেতে পড়তে এসেছিলেন বিশাল। তখন ইয়াহু মেসেঞ্জারের যুগ। ২০০৫ সালে ফতিমা সালাউদ্দিন শাহ নামে এক পাকিস্তানি ছাত্রীর সঙ্গে ইন্টারনেটে আলাপ হয় বিশালের। প্রতিদিন কলেজের কাছের সাইবার ক্যাফেতে চ্যাট করতে যেতেন তিনি। ক্রমেই এই সম্পর্ক গড়ায় ভালবাসায়। ফতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন বিশাল। ফতিমা জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার। প্রথমে বাড়ি থেকে না মানলেও পরে ফতিমার পরিবার মেনে নেয় বিশাল এবং তাঁর সম্পর্ক। শর্ত দেওয়া হয় বিশালকে ইসলাম ধর্ম নিতে হবে। কাছের একটি আইএসডি বুথ থেকে কথা চলত দুজনের। এরপরই পাকিস্তান যাওয়ার কথা মনস্থির করেন বিশাল।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের ভিসার জন্য আবেদন করলেও তা পেতে সমস্যা হচ্ছিল বিশালের। সেই কারণে ফতিমার বাবা সালাউদ্দিন দিল্লিতে কর্মরত পাক হাই কমিশনের একজনের নম্বর দেন বিশালকে। বলা হয় তাঁকেই সমস্ত নথি দিতে। তিরমিজি নামের সেই ব্যক্তিই ভিসার ব্যবস্থা করে দেবেন প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সময়ে, দিল্লির লজে থাকতে শুরু করেন বিশাল। এরপর একাধিক নথি অদলবদল হয় বিশাল এবং তিরমিজির। এই সময়ে নিয়মিত ফতিমার বাবা টাকা পাঠাতেন বিশালকে। পরে তদন্তে দেখা যায় ২০০৬ এর অগাস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৯ বার টাকা পাঠানো হয় পুণের ওই ছাত্রকে। ২০০৬ এর অক্টোবরে ৪ দিনের জন্য এবং ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ২ সপ্তাহের জন্য পাকিস্তান যান বিশাল। এরপরই এপ্রিল মাসে পুণের পুলিশ গ্রেফতার করেন বিশালকে। তাঁর থেকে একাধিক সিডি এবং ছবি উদ্ধার হয়। পুণের একাধিক স্পর্শকাতর এলাকা এবং বিল্ডিংয়ের ছবি ছিল বিশালের কাছে। জেরায় বিশাল জানান প্রথম বারে ফতিমার বাড়ি, শপিং মল ঘুরে দেখলেও দ্বিতীয়বারে গোপন এক জঙ্গি ট্রেনিংয়ের জায়গায় তাঁকে নিয়ে যান সালাউদ্দিন। টানা চার বছর মামলা চলার পর ২০১১ সালে বিশালের কারাদণ্ড হয়। তদন্তে জানা যায়, কীভাবে ক্রমে ক্রমে এক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তিনি।