পরপর কয়েকটি আফ্রিকান চিতাবাঘ প্রাণ হারিয়েছে ভারতে এসে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে নানান মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। এপ্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদদের বক্তব্য, আফ্রিকান চিতাদের থাকার বিশেষ পরিবেশ আছে, ভারতে তা নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বন, মৎস্য ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, যে আটটি চিতাকে কুনোর সংরক্ষিত অরণ্যে রাখা হয়েছে তারা ভাল নেই। কারণ তাদের থাকার মতো পরিবেশই দেওয়া হয়নি। কুনো জাতীয় উদ্যানে দুটি চিতার মৃত্যু হয়েছে এর মধ্যেই। একটি ঘর ছাড়া, ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফিরতেই চাইছে না। আফ্রিকান চিতাদের এমন মতিগতি দেখে চিন্তায় পড়েছে বন দফতর। ভবঘুরে চিতা উবানকে কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছে না। সে আবার এমন জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে। কাজেই তার প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও আছে। এদিকে মৃত দুই চিতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টও চমকে দিয়েছে। নামিবিয়া থেকে আসা ৬ বছরের উদয়ের মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। তার আবার বটুলিজম নামক মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছিল। ৫ বছরের সাসা মরেছে কিডনি ফেলিওরে। পরপর চিতাদের মৃত্যুতে চিন্তায় বন আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গালভরা প্রচার করে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে চিতাদের নিয়ে গিয়েছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল চিতাহীন দেশে নতুন করে এই প্রজাতির সংরক্ষণ করা। প্রায় ৭৪ বছর পরে চিতা দেশে ফিরে আসায় আনন্দও কিছু কম ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে চিতা ছেড়েছিলেন কুনোর জাতীয় উদ্যানে। কিন্তু ছন্দপতন হয় কিছুদিনেই। চিতারা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ বাড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা বলছেন, আফ্রিকান চিতা এইভাবে থাকে না। তাদের বিচরণের জন্য অনেক বড় খোলা জায়গা লাগে। কুনোর জাতীয় উদ্যানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের খোলামেলা জায়গায় ছাড়তে হবে, হাতের কাছে যাতে শিকার থাকে তা দেখতে হবে। আফ্রিকায় যখন চিতারা ছিল তখন তাদের জন্য বিশাল বড় জায়গা রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন দু’বার করে গিয়ে দেখে আসা হত চিতাদের। তারা কী খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে, শরীর ঠিক আছে কিনা এইসব খতিয়ে দেখা হত দিনে কম করেও দু’বার। দূর থেকে বনকর্মীরা নজরে রাখতেন চিতাদের, পশুবিদরাও থাকতেন তাঁদের সঙ্গে। কোনও চিতার আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে এনে চিকিৎসা করা হত। যেহেতু তারা বন্যপ্রাণী তাই সেই মতোই তাদের থাকার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। ভারতে যেখানে চিতাদের রাখা হয়েছে সেখানে এমন পরিবেশ নেই। কীভাবে একটা সংরক্ষিত অরণ্য থেকে চিতা পালিয়ে লোকালয় ঢুকে পড়তে পারে সেটাই আশ্চর্যের। তাছাড়া চিতাদের দেখাশোনাও ঠিক মতো হয়নি বলে অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদদের। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বন, মৎস্য ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চিতার মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। তাদের আঘাত লাগার সম্ভাবনাও বেশি। নিয়মিত দেখাশোনা না করলে চিতাদের ওই পরিবেশে রাখা বিপজ্জনক বলে মনে করছেন তাঁরা।