২০০২ সালে গোধরা কাণ্ডের সময় গণধর্ষণ করা হয় ২১ বছর বয়সি তরুণী বিলকিস বানোকে। গত বছর ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে সেই গণধর্ষণ কাণ্ডের ১১ জন দোষীকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাতের বিজেপি সরকার। যা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে নারোড়া পাটিয়া গণহত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি নেত্রী মায়া কোদনানি, বজরঙ্গ দল নেতা বাবু বজরঙ্গী সহ ৬৭ জনকে মুক্তি দিয়েছে আমেদাবাদের বিশেষ আদালত।
গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত আরও একাধিক মামলায় সম্প্রতি একাধিক অভিযুক্তকে বেকসুর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই মামলাও সেই তালিকারই নবতম সংযোজন। এই ঘটনায় বিরোধীরা কাঠগড়ায় তুলছেন শাসকদল বিজেপিকেই। তাঁদের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মায়া কোদনানি-সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে আদালত। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদীদের ভোটের অঙ্কই একমাত্র পাখির চোখ গুজরাত সরকারের।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গুজরাতের গোধরা স্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুনে পুড়ে মারা যান ৬০ জন তীর্থযাত্রী। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গোটা রাজ্য জুড়ে হিংসার বলি হন প্রায় ২০০০ মানুষ যাদের অধিকাংশই মুসলিম। এরপর দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া একাধিক হিন্দুত্ববাদী নেতাকে গুজরাতের বিভিন্ন আদালত, বিভিন্ন সময়ে মুক্তি দেয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে আদালত তার আগের রায় বদলে নতুন রায় দিয়ে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তদের।
গুজরাত দাঙ্গায় অভিযুক্তদের এভাবে লাগাতার মুক্তি দেওয়ার ঘটনায় সরব হয়েছেন বিরোধী-সহ শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। যেমন উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস এন্ড কনফ্লিক্ট রিসার্চের অধ্যাপক অশোক স্বানের প্রশ্ন, ‘গুজরাতে ২০০০ জন মুসলিম কি আত্মহত্যা করেছিলেন? ভিন গ্রহের প্রাণীরা এসে কি বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেন? নিজের বাড়িতে কি আগুন লাগিয়ে সেই আগুনে পুড়ে মরেন আহসান জাফরি?’
এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের বক্তব্য, গুজরাত দাঙ্গায় এবং সংখ্যালঘু নিধনে তৎকালীন শাসকদলই একমাত্র দায়ী। তাঁর আরও অভিযোগ, গুজরাত দাঙ্গায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু দেশের সংবিধান ও আইনশৃঙ্খলারও মৃত্যু ঘটিয়েছ। কংগ্রেসের অভিযোগ, মায়া কোদনানি ও বাবু বজরঙ্গীর মুক্তি, সরকার পক্ষের গাফিলতির পরিণাম। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মনে করেন, যদি সরকার পক্ষ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই মামলা লড়ত, তবে হয়তো কোদনানি এবং বজরঙ্গীর মুক্তি আটকানো সম্ভব হত।